সাধারণত চলমান অর্থবছরের তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরে কিছুটা হলেও ব্যয় বাড়িয়ে বাজেট দেওয়া হয়। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের ক্ষেত্রে সেই প্রবণতা ভাঙতে যাচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরের চেয়ে অন্তত ২ হাজার কোটি কমিয়ে ৭ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার নতুন বাজেটের রূপরেখা প্রস্তুত করেছে অর্থ বিভাগ। সরকারি ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। বাজেটের এ রূপরেখা আগামীকাল মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড.
অর্থ মন্ত্রণালয়ে ওই সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে দ্বিতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সভা। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের খসড়া উপস্থাপন করে অর্থ বিভাগ।
বর্তমান সরকার একটি বাস্তবায়নযোগ্য ও চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বাজেট দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। তাই সংকোচনশীল মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে অযৌক্তিক সরকারি ব্যয়ে লাগাম টানতেই বাজেটের আকার ছোট করা হচ্ছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তরা। তারা এও বলেন যে, এটিই চূড়ান্ত নয়। আকারের পরিবর্তন হতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও বাজেট বাস্তবায়ন মোটেও সন্তোষজনক নয়। ৯ মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার প্রায় ৩৬ শতাংশ। বছর শেষে বাস্তবায়নের হার ৭০ ভাগের ওপরে ওঠানো সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের নাজুক পরিস্থিতি এবং বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়া বাজেট ছোট করার অন্যতম কারণ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, এর আগে কখনও এভাবে বাজেটের আকার ছোট করা হয়নি।
সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সংকোচনমূলক বাজেট হওয়াই উচিত। তাই এ সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত। অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনের বেশি ব্যয় করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বড় বাজেট দিলেও যথাযথভাবে ব্যয়ের সক্ষমতা নেই। প্রতি বছরই বরাদ্দ করা অনেক অর্থ খরচ হয় না।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আকার সংশোধন করে তা ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। প্রতি বছরই বাজেটের আকার কমিয়ে আনা হয়।
জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই অংশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৫ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতে পারে। চলতি বাজেটে সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা দেশি-বিদেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
নতুন অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস হলো, এবার প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে অনেক কম হবে। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি
সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার।
সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।
এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা