টেলিযোগাযোগ–সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ও টেকসই টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য–উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয় টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর। তবে যাত্রা শুরুর ১০ বছর পরও উল্লিখিত কোনো কাজেই অধিদপ্তরের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং ওই সব কাজের জন্য সরকারের পৃথক সংস্থা রয়েছে। বিটিটিবির কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোনো কার্যক্রমের নজির পাওয়া যায় না। যদিও অধিদপ্তরের দাবি, মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট।

বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) বিলুপ্ত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার কর্মীর চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ২০১৫ সালে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠন করে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন এ অধিদপ্তরের কর্মীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) প্রেষণে কর্মরত। এ ছাড়া টেলিটক, টেশিস, কেব্‌ল শিল্প সংস্থা, সাবমেরিন কেব্‌লস কোম্পানিতেও রয়েছেন কিছু কর্মী। প্রেষণে থাকা কর্মীরা অবসরের আগে অধিদপ্তরে এসে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শেষ করেন। টেলিকম ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এখানে কাজ করেন।

টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের বিষয়ে অবগত আছেন উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসির সঙ্গে টিম হয়ে কাজ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে অধিদপ্তরকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। টেলিকম খাতের অপারেটরদের সেবার মান পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এখানে টেলিকম খাতের মেধাবীরা কাজ করেন এবং তাঁদের এই মেধাকে কাজে লাগাতে না পারলে এটা সংকুচিত হয়ে যাবে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যাঁদের বসানো হয়, তাঁরা চাকরিজীবনের শেষে এখানে যোগ দেন। এ ছাড়া তাঁদের বরাদ্দের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় বেতন–ভাতা বাবদ।

বিটিটিবির কর্মীদের ‘পুনর্বাসনকেন্দ্র’

অধিদপ্তরের কার্যক্রম, বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তাদের দেওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মূলত বিটিটিবির কর্মীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠনের পটভূমি, উদ্দেশ্য ও প্রধান কাজের শুরুতেই রয়েছে বিটিটিবির কর্মীদের চাকরি রক্ষা এবং তাঁদের বদলি, প্রেষণ, পদোন্নতি, অবসর প্রস্তুতি ছুটি, পেনশন ইত্যাদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা।

টেলিযোগাযোগ খাত ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনসের (ডিওটি) আদলে দেশে একটি সংস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিটিটিবির কর্মীদের অনেকে কোম্পানিতে চাকরি করতে চাননি। তাই তাঁদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর হয়। কিন্তু তাঁদের কাজ অন্য সংস্থা করায় অবসরের অপেক্ষা করা ছাড়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মীর তেমন কিছু করার থাকে না। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যাঁদের বসানো হয়, তাঁরা চাকরিজীবনের শেষে এখানে যোগ দেন। এ ছাড়া তাঁদের বরাদ্দের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় বেতন–ভাতা বাবদ।

বিটিআরসির সঙ্গে টিম হয়ে কাজ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে অধিদপ্তরকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। টেলিকম খাতের অপারেটরদের সেবার মান পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছেফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

‘অপ্রয়োজনীয় বিনিয়োগ’

টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের দুটি প্রকল্পের একটি সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (সিটিডিআর)। প্রথম পর্যায়ে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল মেয়াদে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এর আওতায় ক্ষতিকর ওয়েবসাইট শনাক্ত ও সেগুলো ব্লক করতে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও নিক্সে ফায়ারওয়াল ধরনের সরঞ্জাম বসানো হয়।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থাপিত সরঞ্জামের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে সিটিডিআর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় হয় ৪২ কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয় ও আইআইজি সূত্রে জানা যায়, সিটিডিআর প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবের নির্দিষ্ট কোনো আধেয় (কনটেন্ট) ব্লক করে দেওয়া। কিন্তু প্রযুক্তিগত দিক থেকে তা সম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হয়। এ অবস্থায় তারা পুরো ওয়েবসাইট ধরে ব্লক করার কার্যক্রম হাতে নেয়। মূলত পর্নো ও জুয়ার সাইট বন্ধ করে থাকে তারা।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থাপিত সরঞ্জামের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে সিটিডিআর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় হয় ৪২ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথমে এটা শুরু হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সাইট ব্লক করার জন্য যে কাজ, তা আইআইজিগুলোই পারে। এ জন্য এত টাকা খরচ করার প্রয়োজন ছিল না।

দেশে যে পরিমাণ জুয়ার সাইট ও অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে, তাতে তো এই প্রকল্পের বিনিয়োগ অর্থহীন। যেসব সাইট বন্ধ করার কথা বলা হয়, তা ভিপিএন (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে সহজেই ব্যবহার করা যায়। সাইট বন্ধের মতো সেন্সরশিপ না করে বরং সচেতনতা বাড়ানো দরকার ছিলতথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির

আইআইজি কোম্পানিগুলো জানায়, আইআইজি থেকে আইএসপিতে (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা) ব্যান্ডউইডথ যাওয়ার পথেই অধিদপ্তরের ফায়ারওয়ালগুলো বসানো। অর্থাৎ দেশের গ্রাহকের কাছে যত আধেয় যায়, সেগুলো এর মধ্য দিয়ে যায়। এসব যন্ত্রপাতি বসানোয় বিদ্যুতের ব্যবহারও বেশি হয় এবং ইন্টারনেটের মানও পড়ে যায়।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যে পরিমাণ জুয়ার সাইট ও অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে, তাতে তো এই প্রকল্পের বিনিয়োগ অর্থহীন। যেসব সাইট বন্ধ করার কথা বলা হয়, তা ভিপিএন (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে সহজেই ব্যবহার করা যায়। সাইট বন্ধের মতো সেন্সরশিপ না করে বরং সচেতনতা বাড়ানো দরকার ছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ট ট ব র কর ম দ র প রকল প র স ট ড আর ব যবহ র ক জ কর ট ল কম র জন য স ইট ব কর র ক পর য য় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ