প্রথমে রক্ত পরীক্ষা, এরপর ডোপ টেস্ট। এতে উত্তীর্ণ হয়েই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভর্তি হচ্ছেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে এসে কারও মুখে উচ্ছ্বাস, কারও চোখেমুখে কিছুটা আতঙ্ক। নতুন পরিবেশে এত নিয়মকানুন-সবকিছু যেন অভিজ্ঞতার ভান্ডারে নতুন এক অধ্যায়।

আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়েছে স্নাতক প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম। চলবে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। আজ ডাকা হয়েছে ‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১ থেকে ৫০০তম শিক্ষার্থীকে।

ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ জানা থাকে না। সে জন্য প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন সঞ্চালন রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের পরীক্ষা করছে। এরপর ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে এবং তাৎক্ষণিক ফলাফল জানানো হচ্ছে। ডোপ টেস্ট নেগেটিভ হলে শিক্ষার্থী পরবর্তী ধাপে যাচ্ছেন। পজিটিভ হলে তাঁকে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনা হবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে মাদকবিরোধী বার্তা।’

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোপ টেস্ট চালু হয়। এবার চলছে ষষ্ঠবারের মতো। এর আগে, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে চলছে কার্যক্রম।

ডোপ টেস্ট কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নারায়ণ সাহা বলেন, ডোপ টেস্টে পাঁচটি ক্যাটাগরি রয়েছে, স্লিপিং পিল (বেনজুডায়াজিপাইন), ইয়াবা (অ্যাম্পিটামিন), হেরোইন (অপিয়াস), গাঁজা (মারিজুয়ানা) ও অ্যালকোহল। স্লিপিং পিল চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা হলে তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত হলে কাউন্সেলিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে পাঠানো হবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ পদ্ধতিতে। ভর্তি কার্যক্রমে রয়েছে সাতটি ধাপ—রক্ত পরীক্ষা, ডোপ টেস্ট, স্বাক্ষর যাচাই, তথ্য যাচাই ও রেজিস্ট্রেশন, ভর্তি ফি প্রদান, চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন যাচাই এবং হল সংযুক্তিসহ আবাসন আবেদন।

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। খুলনা থেকে ছেলেকে ভর্তি করাতে আসা আবদুল আউয়াল বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। আমরা দূরে থাকলেও সন্তানের মনে থাকবে যে মাদক খারাপ জিনিস। এমন নিয়ম চাকরির ক্ষেত্রেও থাকা উচিত।’

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়া মুয়াজ বিন ওমর বলেন, ‘স্বপ্নের বিভাগে ভর্তি হতে পেরে দারুণ লাগছে। ভর্তির প্রক্রিয়াটাও ছিল ঝামেলামুক্ত।’
ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইট অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলবে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম। এদিন ৫০১ থেকে ৯৫৫তম শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়েছে। একই দিনে স্থাপত্য বিভাগে ১ থেকে ৩০তম শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়েছে।

ভর্তির তারিখ ও ফি পরিবর্তন
১৭ এপ্রিলের ‘বি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি কার্যক্রম অনিবার্য কারণে পরিবর্তন করে ২২ এপ্রিল পুননির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রথম বর্ষের ভর্তি ফি ১৭ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চার বছর গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এবার কোটাসহ ২৮টি বিভাগে মোট আসন ১ হাজার ৬৭১টি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়