মৌলভীবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগমের অপসারণ দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। এ লক্ষ্যে গত বুধবার বিদ্যালয়ে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। 
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালে হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রাশেদা বেগম। যোগদানের পর তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রাশেদার বিরুদ্ধে  বিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানতের তহবিলের টাকা তছরুপ, ব্যক্তিগত পছন্দে অযোগ্য লোকদের বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা অনলাইনে গ্রহণ না করে নিজ হাতে নেওয়া, রসিদ না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 
এদিকে গত ৭ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একটি অংশ রাশেদার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষক মিফতাউজ্জমান সাজু, শ্যামলী চন্দ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দাবি করেন, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মেহনাজ ফেরদৌস গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের আলামত পান। ফলে তিনি হিসাবের কাগজপত্র ঠিক করার জন্য প্রধান শিক্ষককে এক মাস সময় দেন। এর পর তিনি জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে প্রধান করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অডিটের তারিখ দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম ওই দিন অডিট টিমকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেননি। এ ঘটনায় ওই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেন। এ ঘটনায় রাশেদা বেগম আদালতে মামলা দায়ের করেন। নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গত ৮ এপ্রিল থেকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু কথা থাকলেও এখনও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। 
হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম বলেন, গত বুধবার গুটিকয়েক শিক্ষার্থী তাঁর অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছে। পরদিন বিদ্যালয়ের শতশত সাধারণ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় চত্বরে মানববন্ধন করে তাঁকে স্বপদে বহাল রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আইনগতভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপিটি ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হয় মোদের চাকসু দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’, ‘চাকসু মোদের অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’—এমন স্লোগান দেন। 

আরো পড়ুন:

আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ

জবির প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি ‘ক্যাডার’ শিক্ষকরা যেখানে আছেন

আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, “জুলাই মাসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের জানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীও সে সময় শহীদ হয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সবার আগে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ ডাকসু, রাকসু, জাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। “যদি তা না হয়, তাহলে আমরা দুর্বার ছাত্রআন্দোলনের দিকে যাব,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এতদিন রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, এখন আর রোডম্যাপ নয়—তফসিল চাই।”

তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সক্রিয় ছাত্র সংসদ। তাই আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন চাই।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।” 

চাকসু গঠনের ধারণা মূলত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আদলে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ মে। এই নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি।

২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। 

ঢাকা/মিজানুর রহমান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দর নির্বাচনী আসনকে দুই ভাগে বিভক্তি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন 
  • অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
  • জকসুর পথরেখা ও সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
  • জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
  • সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসায় কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
  • না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন : হুশিয়ারী
  • না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন, হুশিয়ারী
  • ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’