চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ আর কতদূর
Published: 18th, April 2025 GMT
জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিংয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০৩৬ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ৫৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডল করতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে। প্রতি বছর ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এমন পূর্বাভাস তাদের। ক্রমবর্ধমান সমুদ্রবাণিজ্য সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ রয়েছে তাদের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষায়। জাহাজ ও কনটেইনারজট দূর করে বন্দরকে আরও গতিশীল করতে কর্ণফুলীর মোহনায় বে-টার্মিনাল নামে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। এ পরামর্শ মেনে ২০১৬ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন্দর। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের ৭ বছর পরও শুরু হয়নি প্রকল্পের মূল কাজ। নির্মাণ হয়নি কোনো স্থাপনা। অথচ ২০২৬ সালের মধ্যে কার্যক্রমে যাওয়ার কথা ছিল সম্ভাবনাময় টার্মিনালটির।
ভূমি অধিগ্রহণ, বিনিয়োগকারী বাছাই, নকশা সংশোধন, অর্থায়নসহ নানা জটিলতায় বার বার পিছিয়েছে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। অথচ ৯০৭ একর জমির ওপর ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ত তিনগুণ। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়ত। কারণ, এখনকার জেটিতে শুধু দিনের জোয়ারের সময় গড়ে ৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা এবং সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে। আবার শীত মৌসুমে এ গভীরতার জাহাজও জেটিতে ভিড়তে পারে না। নতুন টার্মিনাল মোহনার কাছাকাছি স্থানে হওয়ায় সেখানে দিন-রাত জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ থাকত। আবার বর্তমানের চেয়ে বেশি গভীরতা ও দৈর্ঘ্যের জাহাজও পেত সরাসরি নোঙ্গরের সুযোগ। ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল, ২০২১ সালের মধ্যে ১৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং ১২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারবে। বন্দরের সে আশা পূরণ হয়নি। এখনও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়নি মূল প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নানা কারণে অনেক দেরি হয়েছে। একনেক-পূর্ববর্তী অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠবে প্রকল্পটি। এজন্য তাদের কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেকে অনুমোদন হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হবে। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। শিগগির মূল কাজ শুরু করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো.
একনেকে উঠছে আগামীকাল
নানা জটিলতা কাটিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল রোববার একনেকে উঠতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প। একনেকে অনুমোদন পেলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি সই করবে বাংলাদেশ। নতুন টার্মিনালে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার অপেক্ষায় আছে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। সব জটিলতা নিরসন করে এরই মধ্যে প্রি-একনেক অনুমোদন হয়ে গেছে প্রকল্পের। এখন ডিপিপি অনুমোদনের জন্য উঠবে একনেকে।
সরকার ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বে-টার্মিনাল নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। একই বছরে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্ট প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। এরপর ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালে কুনহুয়া নামে কোরিয়ান কোম্পানিকে আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় চলে যায় জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫০০ একর জায়গা প্রতীকী মূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের স্বার্থে বিগত সরকারের আমলে ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের জায়গা মাত্র ৩ কোটি টাকায় দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সর্ববৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরই অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছিল প্রকল্প স্থান। প্রকল্প এলাকায় থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ বাবদ বন্দর থেকে ৩৬৪ কোটি টাকা পাওয়ার পর জমি বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।
কী থাকবে নতুন টার্মিনালে
৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বে-টার্মিনালের তিনটি অংশের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব জেটি দেড় হাজার মিটার। সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের জন্য প্রস্তাবিত জেটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে এক হাজার ২২৫ মিটার করে। চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু জোয়ারের সময় জাহাজ আসা-যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে থাকবে না এমন বাধা। ব্রেক ওয়াটার সুবিধা থাকায় ভাটার সময়েও ১৪ মিটার গভীরতার যে কোনো আকৃতির জাহাজ সহজে নোঙর করার সুবিধা পাবে বে-টার্মিনালে।
বছরে ৫০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতার বন্দর এখন বছরে হ্যান্ডল করছে ৩০ থেকে ৩২ লাখ কনটেইনার। ১২ কোটি টন কার্গো পণ্যও হ্যান্ডল করছে। বে-টার্মিনাল হলে সক্ষমতা আরও তিনগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস। প্রতিটি টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে রাস্তা, রেললাইন, ড্রেনেজ সিস্টেম ও অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা। এসব অবকাঠামোকে কেন্দ্র করে বাড়বে বন্দরের সক্ষমতা।
১৪ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার প্রকল্প
বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৪ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সহায়ক প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় একটি ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কমন ফ্যাসিলিটিজ, সংযোগ সড়ক, রেলপথ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন, টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং একটি সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে তার আগেই তিনটি টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
কোন খাতে খরচ হবে কত টাকা
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেলের জন্য ১ হাজার ৯৭৯ কোটি এবং রেল, সড়ক সংযোগসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপনে সম্ভাব্য খরচ ৫৭ কোটি টাকা।
স্বাক্ষর হয়েছে সমঝোতা স্মারক
তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থায় নির্মিত হবে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং এন্টারপ্রাইজ অব সিঙ্গাপুরের মধ্যে টার্মিনাল ১-এর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে টার্মিনাল-২ নির্মাণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আরেকটি এমওইউ স্বাক্ষর হয়। এছাড়া একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের একটি এমওইউ সই হয়েছে গত বছরের মে মাসে। প্রকল্পের জন্য মোট ৮৫ কোটি ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। অতিরিক্ত ঋণও বিশ্বব্যাংক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত প রকল প র র জন য একন ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩