এসএসসি ২০২৫ : তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে বেশি নম্বর পাওয়ার কৌশল
Published: 22nd, April 2025 GMT
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়টি বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা তিনটি শাখার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে হবে। এর মানে হলো সব শাখার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। পরীক্ষা ২৩ এপ্রিলে। পরীক্ষার মোট নম্বর ৫০। বহুনির্বাচনি অংশে ২৫ নম্বর এবং ২৫ নম্বর ব্যবহারিক অংশে। মোট ২৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে, উত্তর করতে হবে সব কটি প্রশ্নের। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর।
*১ম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায়টি হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে। প্রযুক্তির বিভিন্ন তথ্য ও বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি কোথায় কোথায় কীভাবে রয়েছে তার ওপর বিভিন্ন তথ্য পড়তে হবে। ই-মেইল, ই-লার্নিং, ই-গভর্ন্যান্স, ই-কমার্স, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর দরকারি প্রশ্ন থাকবে। তাই এ অধ্যায়টি বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
তোমাকে মনে রাখতে হবে, একই ধরনের দুটি প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর ভিন্ন যেমন একুশ শতকের সম্পদ হলো ‘জ্ঞান’ এবং পৃথিবীর সম্পদ হলো ‘সাধারণ মানুষ’। আবার বিনা তারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বার্তা প্রেরণের প্রথম সফল বাঙালি বিজ্ঞানী হলেন ‘স্যার জগদীশচন্দ্র বসু।’ তেমনি আরেকটি প্রশ্ন হতে পারে—এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য প্রেরণে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করেন—‘বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনি।’ এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর বুঝে পড়তে হবে।
আরও পড়ুনস্কুলে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়াশোনা শিকেয় ওঠে১৯ এপ্রিল ২০২৫*২য় অধ্যায়
কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিয়ে এই দ্বিতীয় অধ্যায়। তুমি কম্পিউটার ভাইরাস, অ্যান্টিভাইরাস, পাসওয়ার্ড, ইন্টারনেট ব্যবহারের অসাধ্য পাইরেসি, ট্রাবলশুটিং বিষয়ে অনেক প্রশ্ন থাকবে।
মনে রাখতে হবে, আইসিটি যন্ত্র বলতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ইত্যাদি বোঝায়। এ ক্ষেত্রে জ্ঞানমূলক ও উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নের উত্তরের সময় বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখতে হবে। সফটওয়্যার ডিলিট ও আনইনস্টল করা এক কথা নয়।
কম্পিউটার ভাইরাস ও অ্যান্টিভাইরাসের নামগুলোর পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। সিডি, পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ড সহজে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণ ট্রাবলশুটিংয়ের প্রতিটি সমস্যা ও সমাধানের জন্য বাস্তব জ্ঞান থাকতে ভুল হবে। যেমন সিস্টেম চালু না হওয়ার কারণ, মনিটরে কিছু না দেখা, সিস্টেম গরম হয়ে যাওয়া, কম্পিউটার মাঝেমধ্যে শাটডাউন হওয়া, উইন্ডোজ চালুর সময় হ্যাং হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
*৩য় অধ্যায়
তোমার পাঠ্যবইয়ের তৃতীয় অধ্যায় হলো আমার শিক্ষার ইন্টারনেট। এ অধ্যায়ে ডিজিটাল কনটেন্ট, ভিডিও, অ্যানিমেশন, ই-বুক, ফ্রিল্যান্স ইত্যাদি বিষয়ে ভালো করে রিভিশন দেবে। তবেই তোমার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন কমন পড়বে।
ডিজিটাল কনটেন্ট ও এর প্রকারভেদের নাম ও উদাহরণগুলো ভালো করে পড়বে। এ অধ্যায়ে তোমরা প্রায়ই কিছু বিষয়কে একই বিষয় মনে করে ভুল থাকো। যেমন টেক্সট, ছবি, শব্দ, অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন।
তা ছাড়া ই-বুক, ই-বুক রিডার, চৌকস ই-বুক, ভিডিও স্ট্রিমিং, কিন্ডল অ্যাপস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখবে। কয়েকটি ক্যারিয়ারের নাম তোমরা জানো কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা কমিউনিকেশন।
আরও পড়ুনএসএসসি–২০২৫ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের করণীয়০৬ এপ্রিল ২০২৫*৪র্থ অধ্যায়
আমার লেখালেখি ও হিসাব অধ্যায়টি চতুর্থ অধ্যায়। ওয়ার্ড প্রসেসর, স্পেস চেকার, ফ্রন্ট, টেবিল করা, স্প্রেডশিট প্রোগ্রামসহ তোমার লেখালেখি ও হিসাবের জন্য দরকারি।
অনেক সময় ব্যবহারিক কিছু অংশের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের ভার্সন পরিবর্তনের কারণে তোমরা কিছু কিছু ভুল করে থাক। ওয়ার্ড ২০০৭-এর সঙ্গে ওয়ার্ড ২০১০-এর কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অফিস বাটনসহ এর বিভিন্ন অপশনগুলো যেমন নিউ, ওপেন, সেভ, সেভ এজ, ক্লোজ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। হোম ট্যাব, ফন্ট স্টাইল, ফন্ট সাইজ, ইনসার্ট ট্যাব থেকে টেবিল তৈরি করার কৌশল জানতে হবে।
*৫ম অধ্যায়
তোমার পাঠ্যবইয়ের পঞ্চম অধ্যায় হলো মাল্টিমিডিয়া ও গ্রাফিকস। এখানে মাল্টিমিডিয়া, ভিডিও, প্রেজেন্টেশন, পিক্সেল, স্ট্রোক, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি বিষয়ে ঠিক করলে তোমার এ অধ্যায়ের ভালো নম্বর পাবে।
এ অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত বর্ণ বা টেক্সট, চিত্র বা গ্রাফিকস, ভিডিও, শব্দ বা অডিওর সঙ্গে তৃতীয় অধ্যায়ের বিষয় টেক্সট, ছবি, শব্দ, অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশনের মধ্যে ভুল করে থাক। মাল্টিমিডিয়ার অংশসমূহ টেক্সট বা বর্ণ, চিত্র ও গ্রাফিকস, শব্দ বা অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন ও ইন্টারঅ্যাকটিভ কম্পিউটিং সম্পর্কে ভালো করে পড়বে।
মনে রেখো কয়েকটি কথা১.
প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ৵ ও তত্ত্বগুলো মনোযোগসহকারে আরেকবার দেখে নেবে।
২.
খেয়াল রাখবে তোমার পড়া ও জানা কোনো তথ্য ভুল না হয়।
৩.
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকবে। যাতে ভুল করে অন্য কোনো প্রশ্নে বৃত্ত ভরাট না করো। কারণ, ওএমআর শিটে ভুল ঠিক করা যাবে না।
৪.
পরীক্ষার আগের দুদিন সময় পাবে। তাই পাঠ৵বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ভালো করে রিভিশন দাও। তাতে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে।
*লেখক: প্রশান্ত কুমার দাস, সহকারী অধ্যাপক, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের
শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দিয়ে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের বন্ধনে নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ের মধ্যে এলো মহান মে দিবস; আজ ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস।
পুরো বিশ্বের সঙ্গে আজ বাংলাদেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয়, রাজনৈতিক ও সংগঠনিক বিভিন্ন পক্ষ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।
মহান মে দিবসে এবার বাংলাদেশের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
আরো পড়ুন:
অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে হবে
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা ও সম্মান পাক
সভ্যতা নির্মাণের কারিগর শ্রমিকদের সম্মানে এবং ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনে আত্মহুতি দেওয়া শ্রমিকদের শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণে দিবসটিতে বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে জাতীয় ছুটি থাকে। বাংলাদেশেও আজ জাতীয় ছুটি। অনেক দেশে বেসরকারিভাবে দিবসটি পালন করা হয়।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নেমে শ্রমিকেরা আত্মাহুতি দেন। দিনটির ঘটনা ইতিহাসে আজো অম্লান। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় দিবসটি।
মহান মে দিবসের সবচেয়ে বড় অর্জন শ্রমশোষণ কমিয়ে আনার পথ সুগম করা। তবে শ্রমদাসত্ব বিলোপ হয়নি। আধুনিক শ্রমদাসত্বের শেকলে নতুন কায়দায় বন্দি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ উপযুক্ত শ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য অধিকার চায়; যেখানে নিয়োগকারী ও শ্রমিক চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, যে যার পাওনা ও অধিকার বুঝে নেবে।
বাংলাদেশে শ্রম ব্যবস্থা এখনো সেকেলে শোষণের ধারণায় পুষ্ট, যা থেকে শ্রমিকদের বের করে আনার দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের লক্ষ্যে গঠন করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এরই মধ্যে কমিশন তাদের সুপারিশমালা সরকারকে দিয়েছে; এখন চলছে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ। সরকার, রাজনৈতিক দল, নিয়োগকারী, শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞ- সব অংশীজন মিলেই কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশে কী কী পরিবর্তন আসছে, জানতে চাইলে বুধবার (৩০ এপ্রিল) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “শ্রম আইনে অনেক পরিবর্তন আসছে।”
“এখনো পাকাপোক্ত হয়নি, তবে অনেক পরিবর্তন আসছে। আমাদের আলোচনা হয়েছে। যেসব প্রস্তাব আমরা দিয়েছি, যেগুলো আমরা একসেপ্ট করেছি, সেগুলো আইএলও-কে (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) বলা হয়েছে। সেগুলো ফাইনালাইজ করতে হবে। আরো অনেক কিছু আছে,” বলেন তিনি।
কবে নাগাদ শ্রমিকরা নতুন আইনের বিষয়ে ‘সুখবর’ পাবেন, তার কোনো দিনক্ষণ না জানালেও সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত করা হবে।”
অবশ্য কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রচলিত শ্রমিকদের পাশাপাশি অপ্রচলিত খাতের শ্রমিকদেরও স্বার্থ রক্ষার উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে।
তৈরি পোশাকখাতসহ সব শিল্পখাতের শ্রমিকদের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, শ্রম আইনে শিল্পের উদ্যোক্তাদের ‘মালিক’ এর বদলে ‘নিয়োগ কর্তা’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কোনো শ্রমিককে এক দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও চুক্তিপত্র বা পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
সব খাতের শ্রমিকদের পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে শ্রম আইন ‘সর্বজনীন’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সারা দেশের শ্রমিকদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার গঠনের কথা বলেছে কমিশন।
সুপারিশমালা বলা হয়েছে, সেবা খাতে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে স্ব-উদ্যোগে নিয়োজিতরা তথ্য ভাণ্ডারের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন এবং এই নিবন্ধনই শ্রমিক হিসেবে তার পরিচয়পত্র হবে।
মৎস্যজীবী, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও হকারের মতো স্বাধীন শ্রমজীবীদেরও একইভাবে নিবন্ধন করে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব বলে কমিশন মত দিয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম শাখার এক স্মারকে শ্রমিককে চাকরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং মহান মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে, গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি-বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি বিষয়ক টিসিসি) ২০তম সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের প্রতিপালন ব্যতীত শ্রমিক চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএর ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা না হলে, মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিদ্ধান্তের মধ্যে আরো রয়েছে, মহান মে দিবসে সকল কারখানা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ মে দিবসে কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশে মহান মে দিবসে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য সেফটি দিবস’ পালন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বর্ণাঢ্য র্যালি করবে, যেটি উদ্বোধন করবেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হবে এই র্যালি।
মে দিবসে ঢাকার নয়া পল্টনে দুপুর ২টায় শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বললেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মে দিসবের শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেবেন বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পুরানা পল্টন মোড়ে শ্রমিক সমাবেশের করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেখানে কথা বললেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার সঙ্গে থাকবেন নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। বড় পরিসরে এই সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত।
মেহনতি মানুষের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা: প্রধান উপদেষ্টা
মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাণীতে তিনি বলেছেন, বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মহান মে দিবস-২০২৫’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রম, ন্যায্য মজুরি ও শ্রমের মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে’ মার্কেটে শ্রমিকদের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিক ও শ্রমের মর্যাদা সম্মানের সঙ্গে বিশ্বময় স্বীকৃতি লাভ করে। এ দিবসে আদায় হয়েছে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার।
“সে প্রেক্ষাপটে এটি শুধু একটি সাধারণ দিবস নয়, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার ঐতিহাসিক এ দিনে যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে শ্রমিক অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে, তাদেরসহ দেশের সকল মেহনতি মানুষের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’, আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”
“শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক, আর তাদের যৌথ প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের পোশাক খাত, কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, পরিবহণ, প্রযুক্তি - প্রতিটি খাতের উন্নতির পেছনে রয়েছে শ্রমিক এবং মালিকের মেধা ও প্রাণান্তকর পরিশ্রম,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করার আহ্বান রেখে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা যদি ঐক্য ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখি, তাহলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে।”
তিনি বলেন, “এ বছর মহান মে দিবসের পাশাপাশি একইসঙ্গে আমরা ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০২৫’ পালন করছি। শ্রমিকের ন্যায্য স্বীকৃতি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু শ্রমিকদের অধিকারই নয়, এটি শিল্প ও অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম শর্ত।”
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “একইসঙ্গে শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণ পুরো শিল্পখাত এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন-যাত্রায় শ্রমিক ও মালিকের অংশীদারিত্বে দেশের অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত হবে মর্মে আমার বিশ্বাস। আমি ‘মহান মে দিবস-২০২৫’ এবং ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।”
ঢাকা/এএএম/রাসেল