চালে কি আর্সেনিকের দূষণ বেড়ে যাচ্ছে, কী বলছে গবেষণা
Published: 22nd, April 2025 GMT
পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রধান খাবার ভাত। ধান থেকে হয় চাল, চাল থেকে ভাত। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভবত চালে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পৃথিবী দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে চালে আর্সেনিক দূষণও বাড়ছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
চালে আর্সেনিকের উপস্থিতি নতুন সমস্যা নয়। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা চালে বিষাক্ত এই রাসায়নিকের উপস্থিতি কমানোর উপায় খুঁজে পেতে কাজ করছেন। প্রায় সব চালেই আর্সেনিক থাকে। আর্সেনিক একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক। মাটি, পানি, বায়ু—সব জায়গাতেই আর্সেনিক থাকে। এটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধান চাষ করার সময় জমিতে আর্সেনিক জমা হয় এবং গাছের মাধ্যমে মাটি থেকে আর্সেনিক চালে প্রবেশ করে।
তবে প্রাকৃতিক এ প্রক্রিয়ায় চালে যে পরিমাণ আর্সেনিক প্রবেশ করে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে খাবার বা পানির মাধ্যমে যদি অজৈব আর্সেনিক মানবদেহে প্রবেশ করে, তবে তা ক্যানসারসহ অন্যান্য অনেক প্রাণঘাতী রোগের কারণ হতে পারে।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, তাঁরা চালে যে মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ বেড়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ শুধু চীনেই বাড়তি আরও প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।চাল থেকে আর্সেনিকের মাত্রা কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। রান্নার সময় চাল থেকে আর্সেনিক কীভাবে বের করে ফেলা যায়, সেটা নিয়েও কাজ চলছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চালে যে মাত্রায় অজৈব আর্সেনিক পাওয়া গেছে, তা উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ গবেষণার জন্য গবেষকেরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চীনের চারটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ২৮ প্রজাতির ধানের চাষ করেছেন।
গবেষকেরা দেখেছেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়লে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে চালে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যায়। যে পরিমাণ মানুষ বর্তমানে ভাত খান, তাতে চালে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে গেলে কত মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার একটি মডেলও দেখিয়েছেন গবেষকেরা।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, তাঁরা চালে যে মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ বেড়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ শুধু চীনেই বাড়তি আরও প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।
ফুসফুসের জটিলতা ও হৃদ্রোগও বাড়বে বলে জানিয়েছেন গবেষকদের একজন লুইস জিসকা। তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক।
অধ্যাপক জিসকা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দুটি কারণ—বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এর প্রভাবে আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়ছে।
যদিও গবেষকেরা চীনকে গুরুত্ব দিয়ে এই গবেষণা করেছেন। তবে তাঁরা বলেছেন, ইউরোপ–যুক্তরাষ্ট্রসহ চাল উৎপাদনকারী অন্যান্য অঞ্চলেও সম্ভবত একই প্রভাব দেখা যাবে। কারণ, বিশ্বের সব অঞ্চলেই চালে অজৈব আর্সেনিক কমবেশি পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, রান্নার সময় কিছু নিয়ম অনুসরণ করে লাল চাল থেকে ৫০ শতাংশ এবং সাদা চাল থেকে ৭৪ শতাংশ আর্সেনিক দূর করা সম্ভব।অধ্যাপক জিসকা বলেছেন, ‘এমন নয় যে আমরাই প্রথম কার্বন ডাই-অক্সাইড নিয়ে কাজ করছি, এমনটাও নয় যে আমরাই প্রথম বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছি। তবে আমরাই প্রথম কেউ, যারা এই দুটি বিষয়কে মাঠে একত্র করেছি এবং এটাই আমাদের হতবাক করেছে।’
এ গবেষণায় গবেষকেরা নানা হিসাব করে ২০৫০ সালের পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা দেখিয়েছেন। অধ্যাপক জিসকা স্বীকার করেছেন, এটি ছাড়াও এ গবেষণায় আরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।
রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে চালে আর্সেনিকের মাত্রা কমানো সম্ভব.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর স ন ক র ম ত র ক র বন র জন য ক জ কর কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক
গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।
জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’
অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।
জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া