চীন সরকারের উপহারের এক হাজার শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের জন্য নীলফামারীতে জায়গা পরিদর্শন করেছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি উত্তরা ইপিজেডের অদূরে জেলা সদরের দাড়োয়ানীতে সুতাকলের (টেক্সটাইল মিলস) পরিত্যাক্ত ২৫ একরের একটি জায়গা পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয়ের (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম) নির্দেশনা অনুযায়ী, রংপুরের আশপাশে যে জায়গাটি পরিদর্শন করেছিলাম, সেটি মোটেও সন্তোষজনক নয়। এরপরই নীলফামারীর জেলা প্রশাসক অতিদ্রুত এই জায়গার প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠান। আমরা এই জায়গা পরিদর্শন শেষে সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনেকটা পজিটিভ স্থানে আছি।’

দাড়োয়ানী টেক্সটাইল মিলটি জেলা সদরের দাড়োয়ানীতে ১০৮ দশমিক ৫২ একর জমিতে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মিলটির কার্যক্রম দিন দিন সীমিত হয়ে এসেছে। এর পাশেই রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি ক্যাম্প। কাছেই উত্তরা ইপিজেডের অবস্থান। সেখানে বিনিয়োগকারী চীনের একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে দেশটির অসংখ্য নাগরিক অবস্থান করে কাজ করছেন। ইপিজেডটিতে বর্তমানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ৪০ সহস্রাধিক মানুষের। প্রস্তাবিত জায়গায় হাসপাতালটি স্থাপিত হলে ইপিজেডে অবস্থানকারী চীনের নাগরিকেরাসহ এলাকার সব মানুষ চিকিৎসার সুবিধা পাবেন।

দাড়োয়ানীতে টেক্সটাইল মিলের পরিত্যাক্ত জায়গাটিতে চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতাল স্থাপন নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি বলে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতালটি পেতে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি তুলছেন। এ প্রসঙ্গে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ফেসবুকে যা লেখালেখি চলতেছে, এসব নিয়ে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। চীন সরকারের প্রস্তাবিত এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নীলফামারীতেই হবে এবং এই স্থানেই হবে।’

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, ভৌগোলিক ও যোগাযোগের দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রথম পছন্দের জায়গা এটি, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। উপদেষ্টা মহোদয় জানিয়েছিলেন, ১০ থেকে ১২ একর জায়গার কথা। কিন্তু এখানে ২০ থেকে ২৫ একর জায়গা রয়েছে। অতএব এখানে আরও সুন্দরভাবে কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া পাশেই রয়েছে বিমানবন্দর। সড়ক এবং আকাশপথেও যোগাযোগব্যবস্থা অনেক ভালো। সবদিক বিবেচনায় নীলফামারী প্রথম পছন্দ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, সিভিল সার্জন আবদুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো.

সাইদুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর জুবায়ের আল মামুন, জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার প্রমুখ।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ দাড়োয়ানী সুতাকলের পরিত্যক্ত ২৫ একর জায়গা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সেটি একটি রেডি প্লট। পাশে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় নিরাপত্তা রয়েছে। রংপুর বিভাগের মধ্যবর্তী স্থান এবং সড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভালো। কাউকে উচ্ছেদ করতে হবে না। সবদিক থেকে স্থানটি হাসপাতাল করার জন্য উপযোগী।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ত উপদ ষ ট একর জ

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা

চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।

কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ

বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ