আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাহার পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
Published: 23rd, April 2025 GMT
আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে ছয় দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিশেষ বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে মঙ্গলবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। তবে ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সিদ্ধান্ত বদলে বিশেষ বার্তায় বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা ও কর্মসূচি কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার জানানো হবে।
এ ব্যাপারে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (অস্থায়ী) সাব্বির আহমেদ সমকালকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটির ওপর শিক্ষার্থীরা ভরসা রাখতে পারছেন না। কারণ, আগেও কমিটি হয়েছিল। কিন্তু দাবি-দাওয়া পূরণ হয়নি। এ জন্য সবার সম্মতিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি সম্মেলন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতিতে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটার রায় বাতিলসহ ছয় দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন চার লাখের বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করলেও গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন সারাদেশেও অবরোধ হলে আলোচনায় আসে আন্দোলন।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু দাবি তারা পূরণ করেছেন। কিছু দাবি পূরণ সময়সাপেক্ষ। আবার কয়েকটি পূরণের এখতিয়ার তাদের নেই।
জানা যায়, ইতোমধ্যে প্রধান দাবি ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের মামলায় হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন। উচ্চ আদালতের রায়ে কোথাও ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতির কথা বলা হয়নি। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নিয়েছে। এটি অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলে সরকারও একমত এবং কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ইংরেজি মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা চালুর ব্যাপারে সরকারের দ্বিমত নেই। তবে এটি সময়সাপেক্ষ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনেশুনে কেউ যোগ্যতার নিচের পদে চাকরির জন্য আবেদন করলে সরকার বাধা দিতে পারে না। আবার প্রশাসনিক পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ রাতারাতি সম্ভব নয়। এ ছাড়া ২০১৬ সালে পৃথক ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ’ গঠন হয়েছে। ফলে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা দেখছেন না নীতিনির্ধারকরা।
আন্দোলনে উস্কানি
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পরও দফায় দফায় কর্মসূচি এবং স্থগিতের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই ফের আন্দোলনে ফেরার পেছনে উস্কানি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আদালতের রায়ে ছিল না– এমন মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে আন্দোলন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি মহল প্রচার করে– আদালত ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে উন্নীতের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে প্রকাশিত রায়ে দেখা গেল, আদালত কোটা নির্ধারণ নয়, বরং দশম ও ত্রয়োদশ গ্রেডের মাঝামাঝি একটি গ্রেডে উপযুক্ত পদোন্নতির নির্দেশনা দিয়েছেন। সুযোগ নিয়ে ঢাকা পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া এবং শিক্ষকদের মধ্যে ‘টেক-ননটেক’ দ্বন্দ্বও উস্কে দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।