চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের একটি বড় ক্ষেত্র দক্ষিণ চীন সাগর। এখানে চীন অন্য কারও উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। জলরাশিতে দাপিয়ে বেড়ায় দেশটির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী। যতই দিন যাচ্ছে, এই সাগরকে কেন্দ্র করে ভূরাজনীতি ততই জটিল হচ্ছে। সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে চীন। এবার দেশটি সমুদ্রতলে নির্মাণ করতে যাচ্ছে ‘ডিপ সি স্পেস স্টেশন’ অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৬৫০ ফুট নিচে হবে এর অবস্থান।
ওশানোগ্রাফিক ম্যাগাজিন বলছে, এই স্পেস স্টেশনের মাধ্যমে চীন সামুদ্রিক অনুসন্ধানকে ব্যাপক সম্ভাবনাময় করে তুলতে চায়। স্টেশনটি একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ, যার প্রাথমিক নকশা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছয়জন বিজ্ঞানী একসঙ্গে মাসব্যাপী অবস্থান করতে পারবেন স্টেশনটিতে।
চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সাউথ চায়না সি ইনস্টিটিউট অব ওশেনোলজির গবেষকরা জানাচ্ছেন, গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য হবে ঠান্ডা জলস্রোত কীভাবে বাস্তুতন্ত্রে ভূমিকা রাখছে, তা পর্যবেক্ষণ করা। বিশেষ করে প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে থাকা বরফ প্রাকৃতিক গ্যাসের (মিথেন হাইড্রেট) বড় উৎস, যা থেকে বিপুল জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।
স্টেশনটিতে জীবনযাপনের সব উপকরণ থাকবে, যা বিজ্ঞানীদের মিশন পরিচালনায় সহায়ক হবে। এখানে বসে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পরিবেশগত পরিবর্তন ও পৃথিবীর গঠন-সংক্রান্ত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবেন। স্টেশনটির মাধ্যমে একটি চতুর্মাত্রিক গবেষণা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে ‘ভূরাজনৈতিক বিরোধ’ মোকাবিলা করা এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। বিশেষ করে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই এই সাগরে চীনের একক আধিপত্য অস্বীকার করে আসছে। এসব দেশ ও অঞ্চল দক্ষিণ চীন সাগরের কোনো না কোনো অংশে নিজেদের মালিকানা দাবি করে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, চীন সম্প্রতি প্রকল্প-সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তাইওয়ানের আশপাশে ৬২টি চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত হয়েছে।
চীনা একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক ইয়িন জিয়ানপিং বলছেন, সাগরটির অতি শীতল অঞ্চলের বরফে ৭০ বিলিয়ন টন মিথেন হাইড্রেড মজুত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যার পরিমাণ বর্তমানে চীনের মজুত জ্বালানির অর্ধেক। গবেষণা কেন্দ্রটি সাগরে চীনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়। দেশটির ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধীনে সমুদ্রের নিচে গবেষণা স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। যেখানে বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, গবেষক, সাধারণ নাগরিক, আন্তর্জাতিক পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা অবাধে যাতায়াত করতে পারবেন। চীনও চাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণ-প্রতিবেশ নিয়ে গবেষণা এগিয়ে নিতে। এ জন্যই সমুদ্রতলের গবেষণাগার তাদের চাই।
চীনের এই প্রকল্পটি সমুদ্র গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সামুদ্রিক স্পেস স্টেশনটি ঘিরে একটি ‘স্মার্ট টেক প্ল্যাটফর্ম’ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এর মাধ্যমে সামুদ্রিক প্রতিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত প্রকল্পগুলো যৌথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলোর লক্ষ্য থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমানো, সমুদ্রের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো এবং টেকসই সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জোরদার করা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক