দেশের প্রকৃতি–পরিবেশ ও নদী–খাল রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার শিকার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা এখানে চরম নৈরাজ্য তৈরি করে রেখেছিল। সরকার পতনের পর পরিবেশ সুরক্ষায় যে দিনবদল আসার কথা ছিল, তার বড় কোনো লক্ষণও আমরা দেখছি না। বরং নদী–খালের অবৈধ বালু উত্তোলন, বনভূমি দখল ও জঙ্গল উজাড় চলছেই। শুধু এক গোষ্ঠীর জায়গায় এসেছে আরেক গোষ্ঠী, কোথাও আবার ভাগাভাগি করে নিয়ে চলছে এসব অপকর্ম। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

সিলেট সদর উপজেলায় কেওয়াছড়া চা–বাগানে প্রায় ৩০০ একর জায়গাজুড়ে প্রাকৃতিকভাবে একটি মূর্তাবাগান গড়ে উঠেছে। মূর্তার বেত শীতলপাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল। এ ছাড়া মূর্তার বেতের ভেতরের নরম অংশ দিয়ে মণ্ড বা পাল্প তৈরি করা হয়। ফলে মূর্তা বেতের স্থানীয় চাহিদার বড় অংশটি আসে এ বাগান থেকেই। কিন্তু বাগানটি এখন দখল হয়ে যাওয়ার মুখে। সম্প্রতি বাগানের স্থানে স্থানে আগুন ধরিয়ে কয়েক হাজার মূর্তাগাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া স্থানের একটি অংশে পুকুর বানাতে মাটি খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে লম্বা নালা। সে নালায় ঢালা হয়েছে পানিও। কিছু অংশে আবার ধানি জমি তৈরির প্রস্তুতিও চলছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিন এমন দৃশ্য দেখতে পান।

বিএনপির দুজন নেতাই বাগানের জায়গা দখল করে নিজেদের কবজায় নিয়ে পুকুর ও ধানি জমি তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো.

কছির উদ্দিন ও খাদিমনগর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সুরমান আলী। তবে এই দুই নেতা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর বক্তব্য, অভিযুক্ত দুই বিএনপি নেতার সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও সংগঠকেরা বলছেন, মূর্তাবাগান দখল থামাতে স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে তাঁদের দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিক। বাগানের পরিবেশ ও প্রকৃতি বিনষ্ট করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া প্রয়োজন।

আমরা আশা করি, বাগান কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে। স্থানীয় প্রশাসনেরও এখানে তৎপর হওয়া দরকার। বিএনপি কী পদক্ষেপ নেয়, সেটিও দেখার অপেক্ষা। এভাবে বিশাল একটি প্রাকৃতিক বন হুমকির মুখে পড়বে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। বাগানের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণেও উদ্যোগ নেওয়া হোক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব এনপ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ