হিরো সবাই হতে চায়, আমি চাই ভিলেন হতে: পাভেল
Published: 24th, April 2025 GMT
শুরুটা পশ্চিমবঙ্গের ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ৯’-এর মঞ্চ থেকে। এরপর নাটকে অভিনয় দিয়ে দর্শকের মনোযোগ কেড়েছেন তিনি। প্রথমে কমেডি শুনিয়ে মানুষের মন জয় করলেও এখন মন জয় করছেন দুর্দান্ত সব অভিনয় দিয়ে। ওয়েবেও দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুনশিয়ানা। বলা হচ্ছে, সাইদুর রহমান পাভেলের কথা।
নির্মাতা তপু খানের ‘কট বিহাইন্ড’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু গণমানুষের কাছে পৌঁছতে পারছিলেন না। এরপর কাজল আরেফিন অমির ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ পান। তাঁর প্রায় দশ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক দেখেছেন দর্শক। কাজল আরেফিন অমির সিরিয়াল ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ তাঁকে অন্যরকম পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছে। ওই সিরিয়ালে জাকির চরিত্রটি তাঁর জীবনের গ্রাফ বদলে দেয়। তাঁকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোর প্রসঙ্গে পাভেল বলেন, ‘২০১৫-১৬ সালে মীরাক্কেলের সেই সিজনে ফেসবুক ভোটে প্রথম হয়েছিলাম। চূড়ান্ত রায়ে হয়েছি দ্বিতীয় রানারআপ। পরে দেশে ফিরে বিভিন্ন স্টেজ শো করেছি। নাটকে টুকটাক কাজ করে যাচ্ছিলাম। সেই কাজগুলো দর্শকের মধ্যে ছড়াচ্ছিল না। মীরাক্কেল প্রচারের পর যেভাবে মাতামাতি হতো, দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছি বলে গর্ব করা হতো, সেটি ছিল মুখে মুখে। যারা গর্ব করত, দেশে ফেরার পর তাদের অনেকের কাজ থেকে সহযোগিতা পাইনি। তবে কখনও হতাশ হয়নি। এটি জানি লেগে থাকলে সাফল্য আসবে। এখন আমার ফোকাস অভিনয়ে। আমি অভিনেতা হিসেবে বাকি জীবন কাটাতে চাই। এমন কিছু কাজ রেখে যেতে চাই যা দর্শক মন ছুঁতে পারে।’
এ সময়ের জনপ্রিয় একটি নাটক হচ্ছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’। সেই নাটকের প্রতিটি চরিত্রের মতো আলোচিত একটি চরিত্র হচ্ছে ‘বজরা বাজারের জাকির’। এখন অনেকেই তাঁকে পাভেল নয়, জাকির নামেই বেশি চেনে। বিষয়টি বেশ উপভোগও করছেন তিনি। দীর্ঘ আড়াই বছর পর সিরিয়ালটি আবারও প্রচারে আসছে। এবারের কাজটি নিয়েও আশাবাদী তিনি। এ প্রসঙ্গে পাভেল বলেন, ‘‘শুরুতে সবাই আমাকে মিরাক্কেলের পাভেল নামে চিনত। এখন বলে, বজরা বাজারের জাকির। আবার অনেকে উনিশ-বিশ জাকিরও বলে। এটি শুনতে ভালোই লাগে। জীবনে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমাকে আলোচনায় এনে দিয়েছে ‘জাকির’। রাস্তায় আমাকে জাকির চরিত্রের নাম ধরে মানুষজন যখন ডাকে তখন অন্যরকম ভালোলাগা ছুঁয়ে যায়। আবারও এর শুটিং শুরু করেছি। আগের মতো এবারও সাড়া পাবো বলে আশা করছি।’’
কাজল আরেফিন অমির ‘হাউ সুইট’ ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিনি। কাজটি গত ঈদে প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বঙ্গ অরিজিনালে এসেছে তাঁর অভিনীত কাজ ‘সেলুন-টু’। কাজ দুটি নিয়ে বেশ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। অভিনয় নিয়ে আগামীর ইচ্ছার কথাও জানান এ অভিনেতা। হতে চান ক্যারেক্টার ভিলেন। গল্পের গল্প হতে চান। বলছিলেন, খুব ইচ্ছা ভিলেন হওয়ার। হিরো সবাই হতে চায়, আমি চাই ভিলেন হতে। কারও মতো ভিলেন হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। নিজের মতো করে অভিনয়টা করতে চাই। পাভেলের ইচ্ছে, নিজেকে ভাঙার মতো চরিত্র পেলে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রেও কাজ করবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ ন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।