কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ইন্দাস নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক চুক্তি ‘ইন্দাস ওয়াটারস ট্রিটি’ কার্যত স্থগিত করেছে ভারত। ১৯৬০ সালে সই হওয়া এ চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত দুটি যুদ্ধের মধ্যেও এখন পর্যন্ত বহাল ছিল। এছাড়াও এটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানি ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবার ভারত এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করায়, দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা।

ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ভারত পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হবে।

চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে? বিশেষ করে ইন্দাস অববাহিকার সেই তিনটি নদীর প্রবাহ, যেগুলো পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ। চুক্তি অনুযায়ী ইন্দাস অববাহিকার রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রু ভারতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ইন্দাস, ঝেলম এবং চেনাব নদীর পানির ৮০ শতাংশ পাকিস্তান পায়। পাকিস্তানের কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় একটি অংশ এই পানির ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে এ বিশাল পরিমাণ পানি আটকে রাখা বা অন্যদিকে প্রবাহিত করা বাস্তবে খুব একটা সম্ভব নয়। ভারতের অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ বা পানির প্রবাহকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তিনির্ভর, যেখানে বড় আকারে পানি জমিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে বর্ষার সময় বিশাল এই জলপ্রবাহ আটকে বা ঠেকিয়ে রাখা কঠিন।

তবে ভারত যদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়া নতুন বাঁধ বা অবকাঠামো নির্মাণে যায়, তাহলে শুকনো মৌসুমে এর প্রভাব পাকিস্তানের ওপর ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, তখন নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ কম থাকে, এবং ভারত যদি সেই পানি ধরে রাখে, তবে পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে পানিপ্রবাহ ও বন্যা সম্পর্কিত তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখন চুক্তি স্থগিতের ফলে ভারত চাইলে এই তথ্য পাকিস্তানকে জানানো বন্ধ করে দিতে পারে। পাকিস্তানের সাবেক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগেও ভারত এ-সংক্রান্ত মাত্র ৪০ শতাংশ তথ্য পাকিস্তানকে দিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একে ‘ওয়াটার বম্ব’ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। অর্থাৎ উজানের দেশ হিসেবে ভারত যদি হঠাৎ পানি আটকে রাখে এবং পরে আকস্মিক তা ছেড়ে দেয়, তাহলে ভাটিতে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এতে ভারতের নিজস্ব এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি কৌশলগত দিকও সামনে এসেছে। ইন্দাস নদীর উৎস চীনের তিব্বতে। ২০১৬ সালে ভারতের হুঁশিয়ারির পর চীন একবার ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী আটকে দিয়েছিল। এখন চীন তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ করছে, যা ভারতের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।

সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে নেওয়া ভারতের এই পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বাস্তব রূপায়ণ সহজ নয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে এর কৌশলগত প্রভাব পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ র প র জন য ইন দ স প রব হ

এছাড়াও পড়ুন:

কনসার্টের জন্য কত পারিশ্রমিক নেন অরিজিৎ

তাঁর সংগীতের সফর শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থেকে। আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে অরিজিৎ সিং ভারতের অন্যতম আলোচিত শিল্পী। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কনসার্টে গাওয়ার জন্য বেশি পারিশ্রমিক নেন। আসলে কত পারিশ্রমিক নেন গায়ক?

সম্প্রতি সুরকার মন্টি শর্মা পিংকভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অরিজিতের পারিশ্রমিক নিয়ে। তিনি বলেন, ‘একটা সময় পরে অনেক কিছুর বিবর্তন হয়েছে। আগে গোটা একটা গান আমরা দুই লাখ রুপিতে শেষ করতাম। এর মধ্যে গোটা অর্কেস্ট্রা, ৪০ জন বেহালা বাদক, আরও অনেক কিছু থাকত। তারপর ধীরে ধীরে গানপ্রতি নিজের জন্য ৩৫ হাজার রুপি নিতে থাকলাম।’

এরপরই অরিজিতের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। মন্টি বলেন, ‘অরিজিৎ যখন আসত, তখন টানা ছয় ঘণ্টা আমার সঙ্গে একটা গান নিয়ে বসত। এখন ও একটি অনুষ্ঠানের জন্য দুই কোটি রুপি নেয়। তাই ওকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হলে দুই কোটিই দিতে হবে। আগে তো মানুষ বেতারে ও টিভিতেও গান শুনত। কিন্তু এখন তাদের কাছে ইউটিউব আছে। এখন গান শোনার মাধ্যম অনেক বড়। তাই অর্থের পরিমাণও এখন বেড়েছে। তাই এখন যদি ১৫-২০ লাখ টাকা দিয়ে একটা গান করি, তা হলে ৯০ শতাংশ স্বত্ব কিনে নেয় অডিও সংস্থা। এই অডিও সংস্থাগুলো এখন আয় করছে।’

আরও পড়ুনযার গানে মুগ্ধ অরিজিৎ সিং, কে এই এনজেল নূর? ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ