শিক্ষা যেন কেবল উপার্জনের উপায় না হয়ে ওঠে: পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 26th, April 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শিক্ষা মানে শুধু ডিগ্রি অর্জন নয়। এটি সত্য, ন্যায় ও পরিবেশ রক্ষার প্রতি একটি গভীর দায়বদ্ধতা। শিক্ষা যেন কেবল উপার্জনের উপায় না হয়ে ওঠে; বরং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সমাজ বদল, দেশ গড়া এবং অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর হাতিয়ার হতে হবে। শনিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের উচিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে যুক্ত হওয়া। যেকোনো অবস্থায় সবার উপরে ন্যায়বিচার ও দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জলাশয় ও বনভূমি দখল ঠেকাতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে প্লাস্টিক দূষণ, শব্দদূষণ, বন উজাড় এবং জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নারী ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম একে-অপরের পরিপূরক। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন, অথচ তারাই সবচেয়ে কম দায়ী। এই ন্যায়ের প্রশ্নেই জলবায়ু সংগ্রাম এক নারীবাদী আন্দোলন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরাই আগামীর নেতৃত্ব, তোমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তই এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই উন্নয়ন চাই, তবে সেটা যেন প্রকৃতির ওপর সর্বনাশ ডেকে না আনে। এসো, আমরা প্রকৃতিকে যতটা সম্ভব কম বিরক্ত করি। তবেই প্রকৃতি আমাদের ভালোবাসবে। শুধু চাকরি নয়, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য তোমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণায় পরিবেশবান্ধব সমাধান উদ্ভাবনে উৎসাহিত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য দ র জওয ন হ স ন পর ব শ উপদ ষ ট পর ব শ জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।