লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
Published: 26th, April 2025 GMT
এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, গ্রীষ্মে ১৮ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ কারণে বাড়তি এলএনজি আনা হচ্ছে। জ্বালানি তেল এখন যেটা পিডিবি নিচ্ছে না, সেটাও নেওয়া হবে। পুরোপুরি লোডশেডিং–মুক্ত না হলেও সহনীয় মাত্রায় থাকবে।
‘জ্বালানি–সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে আজ শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের সহায়তায় বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি)।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, বকেয়া বিল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তাই কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), জ্বালানি তেলের মতো প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করা যাবে। আশা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি সামলানো যাবে। তবে খরচও কমাতে হবে। তাই জ্বালানি তেল ব্যবহারের বিষয়টাও হিসাবে রাখতে হবে। ইতিমধ্যে দিনে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। ওই সময় ১৭৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। লোডশেডিংয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। ঘাটতি শুরু হলেই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাম এলাকা দিয়ে লোডশেডিং শুরু করে; এবার এটা হবে না।
বকেয়া শোধ করতে গিয়ে ভর্তুকি বেড়েছে, এটি আরও বাড়বে কি না; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, চলতি অর্থবছরে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পে কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো হয়েছে। সাশ্রয় করা অর্থ বকেয়া শোধে কাজে লেগেছে। আগামী বছর তো বকেয়ার দায় নেই। তাই যতটুকু আমদানি হবে, ততটুকুর বিল। ভর্তুকি বাড়বে না, আরও কমবে।
সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সমুদ্রে তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমা না দেওয়ার বিষয়ে কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার কমিটি কথা বলেছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) সংশোধন করা হচ্ছে। এরপর নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
তবে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হাতে দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়টি বিইআরসিতে দিতে চান। তবে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে কি হবে? এখন তো সরকার ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করে। তাই এটা নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। এখন তেলের দাম কম। প্রতিবেশী দেশের দাম বিবেচনায় কমানো হচ্ছে না। এ রকম নানা বিষয় চিন্তা করতে হয়। নাজুক পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করে কি না; সেটাও বিবেচনায় রাখতে হয়।
কাতারের জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বকেয়া শোধ করায় দাম কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছিল। কাতার বলেছে, বিদ্যমান চুক্তিতে কিছু করা যাবে না। তবে ভবিষ্যতে আরও এলএনজি আমদানি করা হলে, তারা কম দামে দেবে।
শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বেশি দামে গ্যাস নেওয়ার জন্য ৬০০ থেকে ৭০০ আবেদন জমা পড়েছে। তারা প্রতি ইউনিট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দিয়ে গ্যাস নিতে চায়। অথচ সবাই বলেছে, বিনিয়োগ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। আর বলছে বৈষম্য, কিসের বৈষম্য। যার প্রয়োজন সে যদি বেশি দামে নেয়, তাহলে কিসের বৈষম্য। গ্যাসের দাম বেশি হলে তারা বিকল্প জ্বালানি দেখবে।
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিদ্যুৎ খাতের মূল সমস্যা হলো ভোক্তাদের শোষণ করার জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে করা চুক্তিগুলোতে ট্যারিফ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ট্যারিফ পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি কাজ করছে। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচকে বেঞ্চমার্ক ধরা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, এখন দেশে ব্যবহৃত গ্যাসের ২৫ শতাংশ আমদানি হয়। ২০৩০ সালে আমদানি করা এলএনজির অংশ হবে ৭৫ শতাংশ—এটা বলেই শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল পেট্রোবাংলা। পুরোপুরি আমদানির দিকে চলে যাচ্ছে জ্বালানি খাত। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো সক্ষমতা ব্যবহার না করে বেশি খরচের তেলচালিত কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। জ্বালানি শুধু উন্নয়নের বিষয় নয়, ন্যায়ের বিষয়, যা প্রতিষ্ঠা করা যুদ্ধের মতো।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানিনীতির সংস্কার দরকার। যেখানে জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে থাকবে। সংকট সমাধানে বর্তমান সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত জ্বালানি রূপান্তরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে আসছে। জ্বালানি চাহিদার প্রক্ষেপণ নতুন করে মূল্যায়ন করা দরকার। কোনোভাবেই এলএনজিকে উৎসাহিত করবেন না, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে হবে।
সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পিডিবির চেয়ারম্যান মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, ভালো করে জানি না: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয় আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীন, সিঙ্গাপুর—যে দেশ থেকেই আনা হয় না কেন, তুলনামূলক দর দেখা হয়। বিষয়টি এত সহজ নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানিকে কাজ দিয়ে দেওয়া হবে। আর পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, তা ভালো করে জানিও না আমরা।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন।
অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল, এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না।
মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাকসিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যোগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যাকসিলারেট এনার্জি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উডল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এলএনজি সরবরাহের পাশাপাশি এলএনজি রূপান্তরের ভাসমান টার্মিনাল ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে তারা।
বিভিন্ন দেশের ২৩টি কোম্পানি থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করছে। এর মধ্যে অ্যাকসিলারেট এনার্জিও রয়েছে।
কর্মসংস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেশি কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা–বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায়, সেটা অবশ্যই প্রভাব পড়ে। ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমবে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা ঘাটতিটা কমানোর জন্য কী কী আমদানি করতে পারে, দেখছে। সেখানে মোটামুটি আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’
সার আমদানি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি। চট করে ব্যবস্থা নেব না। বিস্তারিত জানি না, সার আনে বেশির ভাগ কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এটা তাদের দায়িত্ব। বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখব।’