মিরসরাইয়ে ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্পের (সিডিএসপি) বাঁধ। ভাটি এলাকায় পলি মাটি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ এবং ওচমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের শত শত মাছের খামার। পুরোদমে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বাঁধের ভাঙন রোধ করা না গেলে ফসলি কৃষিজমি ও মৎস্য খামারে লবণ পানি ঢুকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন স্থানীয়রা। 
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অলক দাশ বলেন, ‘সিডিএসপি বাঁধের ভাঙনের কথা শুনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা স্থান পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরেজমিন দেখা যায়, ফেনী নদীয় ওপর তৈরি মুহুরী সেচ প্রকল্পের দুই কিলোমিটার দক্ষিণে প্রায় ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে সিডিএসপি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও বাঁধের অর্ধেকের বেশি অংশ নদীতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হয়েছে বড় ফাটল। বাঁধের পূর্ব পাশঘেঁষে রয়েছে শত শত মৎস্য খামার প্রকল্প। বাঁধে ভাঙনের কারণে প্রকল্প মালিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।
স্থানীয় লোকজনের মতে, মুহুরী সেচ প্রকল্পের ভাটিতে প্রায় ১,১০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে পলি মাটির স্তর জমেছে। এতে নদীর প্রবাহ পথ বদলে সোনাগাজীর থাক খোয়াজের লামছিতে ছোট ছোট চর জেগে উঠছে। অপরদিকে মিরসরাই অংশের উত্তর ইছাখালী অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় ভাঙন রোধে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সিসি ব্লক দেওয়া হলেও সেগুলো নদীতে চলে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিডিএসপি বাঁধের পশ্চিম পাশে সুরক্ষা ব্লক না বসালে চলতি বর্ষায় এখানকার বাঁধ ভেঙে ওসমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।  
জানা গেছে, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্পের (সিডিএসপি) আওতায় মিরসরাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৪ সালে ১১.

৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধটি নির্মাণের পর ইছাখালী ও ওসমানপুর ইউনিয়নের মৎস্য চাষিদের ভাগ্যের দুয়ার খুলতে থাকে। সিডিএসপি বাঁধকে ঘিরে গড়ে উঠে শত শত মৎস্য প্রকল্প। এসব মৎস্য প্রকল্পে চাষাবাদ করে ভাগ্য বদলেছে অসংখ্য মানুষের। কিন্তু গত বছরের ভয়াবহ বন্যা ও নদীর জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঁধটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ একরের ১০-১৫টি মৎস্য খামার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ফেনী, সোনাগাজী ও মিরসরাই এলাকাকে বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় ফেনী নদীর ওপর স্লুইসগেট দিয়ে মুহুরী সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সেচ প্রকল্পের কারণে ফেনী নদীর ভাটি এলাকার বিশাল অংশজুড়ে পলি জমায় মুহুরী সেচ প্রকল্প কার্যকারিতাও প্রায় হারাতে বসেছে। এতে চট্টগ্রাম ও ফেনী সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর স্বাভাবিক গতিও বদলে গেছে। ফলে ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সিডিএসপি বাঁধ। অথচ এই বাঁধ দেওয়ার পর এখানকার মানুষ আশায় বুক বাঁধে। গড়ে তুলেন শত শত মৎস্য প্রকল্প। কিন্তু সিডিএসপির বাঁধে ভাঙনের ফলে তারা এখন দিশেহারা। ভাঙনের তীব্রতার কারণে অনেকেই মৎস্য চাষ বন্ধ রেখেছেন।
ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়ি ভিটে, কৃষিজমি ও শত শত মৎস্য প্রকল্প নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙনের স্বল্প দূরত্বে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজও কিছুটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের আগস্টে সিডিএসপি বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। তখন ভাঙা অংশে নদীর প্রবাহ অন্যদিক দিয়ে ঘুরিয়ে বাঁধ নতুন করে নির্মাণ করা হয়।
মিরসরাইয়ের ইছাখালী টেকেরহাট এলাকার মৎস্য চাষি নুরুল মোস্তফা, নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিডিএসপি বাঁধ ঘেঁষে পূর্ব পাশে আমাদের ৮৯ একর আয়তনের মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা আপাতত প্রকল্পগুলোয় মাছ চাষ বন্ধ রেখেছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। দ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের ভাঙন রোধে কাজ শুরু করবে।’  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মৎস য প রকল প স চ প রকল প প রকল প র ব ল ন হয় স ড এসপ ম রসর ই শত শত ম

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ