পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রতিবছর আম উৎপাদন কৃষকদের জন্য আয়ের বড় উৎস। তবে চলতি বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ অঞ্চলে আমের গাছে মুকুল আসলেও তা রক্ষা পায়নি পর্যাপ্ত পানির অভাবে। এতে ফলন আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পাহাড়ের আম চাষিরা।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার গ্রীষ্মের শুরু থেকে তাপমাত্রা ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি। অন্যদিকে, বৈশাখের শুরুতে স্বাভাবিকভাবে যে বৃষ্টি হয়, সেটি না হওয়ায় আমের গাছে সময়মতো পানির জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক গাছের মুকুল ঝরে গেছে। আবার যেসব গাছে ফল এসেছে, তাও হয়েছে কম ও মানসম্মত নয়।
প্রাকৃতিক বৈরিতা ও পানির অভাবের কারণে উৎপাদন ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। ফলে সরাসরি আর্থিক প্রভাব পড়ছে স্থানীয় আম চাষিদের মাঝে।
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বান্দরবানে ৬০ শতাংশ রাংগৈ, ২০ শতাংশ আম রূপালী ও অন্যান্য জাতের ১০ শতাংশ আমের আবাদ হয়ে থাকে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১০ হাজার ২৩৯ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৮৫ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। তবে প্রাকৃতিক বৈরিতা ও পানির অভাবের কারণে উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে বলে জানান।
চাষিরা বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিকল্প সেচ সুবিধা, আগাম আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক বৈরিতা মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
লাইমি পাড়ার আমচাষি আভয় বম জানান, তার পাঁচ একর আমবাগানে এ বছর গাছে মুকুল এসেছিল ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা ঝরে গেছে। তিনি জানান, গত বছর পাঁচ একর বাগান থেকে প্রায় ২০০ মণ আম পেয়েছিলেন, কিন্তু এবার ১৫০ মণও হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
গেৎশিমনি পাড়ার আমচাষি নান থাং বম বলেন, এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের ফলন অনেক কম হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমের আকার ও গুণগত মানও আগের বছরের তুলনায় অনেক খারাপ। গত বছর তিন-চারটি রাংগুই আমে এক কেজি হতো, আর এবার ছয়-সাতটি আম লাগছে এক কেজি করতে।
আম চাষি মংক্য চিং মারমা জানান, এ বছর আমের ফলন তুলনামূলকভাবে কম হলেও পাহাড়ি আমের চাহিদা রয়েছে বেশ। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আম ব্যাপারিরা সরাসরি বাগানে এসে প্রতি মণ আম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পুরো বাগানই একসঙ্গে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চট্টগ্রাম থেকে আসা আম ব্যবসায়ী মো.
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমএম শাহ্ নেয়াজ জানান, এ বছর আমের উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমের মুকুল আসার পর গুটি বাঁধার সময় গাছে সেচ দেয়ার প্রয়োজন ছিল অথবা সময়মতো বৃষ্টি হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি হয়নি। অনিয়মিত বৃষ্টি ও দীর্ঘ বিরতির কারণে ফলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি, কিছু কিছু এলাকায় কৃষকদের দেখিয়েছি যে, গাছের গোড়ায় সেচ না দিয়েও ফলন রক্ষা করা সম্ভব। যদি ফল বৃদ্ধির সময়ে গাছে স্প্রে মেশিন ব্যবহার করে পানি ছিটানো যায়, তবে ফল ঝরে পড়া কিছুটা রোধ করা যাবে।’’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, বৃষ্টির দীর্ঘ বিরতির সময় কৃষকদের বাগানে পানি সরবরাহের ন্যূনতম ব্যবস্থা করতে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, জুমঘরে টিনের চাল স্থাপন করে দুই পাশে চার ইঞ্চি পাইপ বসানো হবে। এই দুই পাইপ সংযুক্ত করে একটি পাইপের মাধ্যমে ১০ হাজার লিটারের পানির ট্যাঙ্কে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যাবে। এই পানি পরবর্তীতে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে গাছে ব্যবহার করা হলে ফল ঝরে পড়া অনেকটাই কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন এ বছর র সময় হওয় য়
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।