অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সন্দেহজনক লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে পুঁজিবাজারের ৬১৭টি বেনিফিশারি ওনার্স (বিও) হিসাব স্থগিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। স্থগিত এসব বিও হিসাবে প্রায় ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে লেনদেন বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৭৬টি বেনিফিশারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পর সন্দেহমূলক লেনদেন, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে, কিংবা রাজনৈতিক সম্পৃক্তাতার কারণে ৬১৭টি বিও হিসাব স্থগিত করেছে বিএসইসি।
আরো পড়ুন:
ওয়ান ব্যাংকের পর্ষদ সভা ২৫ মে
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের প্রয়াত উদ্যোক্তার শেয়ার হস্তান্তর
জানা গেছে, সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে ৬১৭টি বিও হিসাব স্থগিতের তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে ৩৫৭টি বিও হিসাব বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুরোধে স্থগিত করেছে বিএসইসি। সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে-দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা।
এছাড়া আরো কিছু স্থগিত করা হয়েছে সরকারি সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। পাশাপাশি বিএসইসিও বেশকিছু বিও হিসাব স্থগিত করেছে।
এছাড়া ১০৯ বিও হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে। এর মধ্যে বিও হিসাবের বেশ কয়েকজন মালিক বিএসইসির জরিমানার আওতায় পড়েছেন। এছাড়াও, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির (এএমসি) ছয়টি বিও হিসাব স্থগিত করেছে বিএসইসি।
এদিকে, বিএসইসি ৩৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিও হিসাব বন্ধ করেছে সুবিধাভোগী হওয়ার কারণে। এই প্রভাবশালী ৩৩ জনের নিকট আত্নীয় ও পরিবারের সদস্যসহ মোট ১২৭টি বিও হিসাব স্থগিত করেছে সংস্থাটি। স্থগিত বিও হিসাবগুলো কবে নাগাদ চালু হবে তা এখনো নিশ্চত করে বলতে পারছে না বিএসইসি। তবে শিগগিরই এসব বিও হিসাবের মালিকদের কার অপরাধ যাচাই-বাছাই করার কার্যক্রম শুরু হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/এনটি/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতি মাসের শেষে অংশীজনের সঙ্গে বসবে বিএসইসি
বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে বা সচল রাখতে আরোপিত ফি প্রত্যাহার এবং বিনিয়োগকারীদের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ নগদে জমা বা উত্তোলনের প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এছাড়া শেয়ারবাজার বিষয়ে প্রতি মাসের শেষে সকল অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গতকাল বিএসইসির ডাকে শেয়ারবাজার অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আজ রোববার ডিএসইর কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। গত ৮ মে চট্টগ্রামে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা গ্রুপ এবং স্টক এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) দায়িত্বে আছেন। এছাড়া গত ১৭ মার্চ এফআইডি থেকে শেয়ারবাজার উন্নয়নে গঠিত কমিটির সভাপতি তিনি।
গতকালের বৈঠকে অব্যাহত দর পতন ঠেকাতে স্বল্পমেয়াদি বা তাৎক্ষণিক সমাধান কী হতে পারে, সে বিষয়ে মতামত চান বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, আলোচনায় বড় অংশ জুড়ে ছিল বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত ব্যাংক হিসাবের সুদ আয় কে পাবে, কেন পাবে এবং বিকল্প কী হতে পারে– এমন বিষয় নিয়ে। এ নিয়ে মীমাংসা আগেই হয়েছিল। আবারও আলোচনার কথা বলে এটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন একটি ছোট ইস্যু বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখার অর্থই হলো বাজার আসলে মৌলিক সংকট বোঝে না।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে কী করতে হবে– এমন প্রশ্নে কেউ বলেছেন, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়াতে হবে। আবার কেউ বলেছেন, মূলধনি মুনাফায় কর প্রত্যাহার করতে হবে। লভ্যাংশে উৎসে করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করতে হবে।
আলোচনার পরিবেশ কেমন ছিল? এমন প্রশ্নে একজন কর্মকর্তা বলেন, খুবই আন্তরিক পরিবেশ ছিল। যদিও বাজার সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি। আগে অংশীজনদের গুরুত্ব না দিয়ে বিএসইসি নিজের মতো চলার নীতিতে ছিল। এখন মনে হচ্ছে, নীতি বদলাতে চাচ্ছে। এটি ইতিবাচক। তারা প্রতি মাসের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে বসবে, সমস্যা থাকলে শুনবে, পরামর্শ থাকলে তাও নেবে বলে জানিয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি
এদিকে ঈদের দীর্ঘ ছুটি পুষিয়ে নিতে সরকারের সিদ্ধান্তে গতকাল অন্যান্য অফিসের মতো শেয়ারবাজারও খোলা ছিল। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ২৫৩টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭৩টির। এতে ডিএসইএক্স সূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪৮২০ পয়েন্টে উঠেছে। তবে লেনদেন ৩৪ কোটি টাকা কমে ২৬৩ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।