শাহরিয়ার হত্যার বিচার চেয়ে আবার শাহবাগ অবরোধ ছাত্রদলের
Published: 20th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে আবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার পর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন। তাঁরা ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
শাহরিয়ার হত্যা মামলার তদন্তে ‘গাফিলতির’ প্রতিবাদ এবং ‘প্রকৃত’ হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার-বিচারের দাবিতে গত রোববার বিকেলে পৌনে দুই ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিল ছাত্রদল।
রোববারের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। শাহরিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারে সরকারের সদিচ্ছার অভাব দেখা গেলে যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকিও দিয়েছিলেন তাঁরা।
গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নিহত হন। তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যা তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে ছাত্রদলের শাহবাগ অবরোধ১৮ মে ২০২৫গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে শাহরিয়ার গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় নিহতের ভাই শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন।
শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যা-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুললেন বড় ভাই শরীফুল১৮ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হব গ ম ড় ছ ত রদল র অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানি দায়ের ৮২ শতাংশই ১০ ব্যাংকে
নিয়ম শিথিলের পরও আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। এরই মধ্যে অনেক বিলে জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় অপরিশোধিত স্বীকৃত আমদানি বিল আবার বাড়ছে। গত এপ্রিল শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। আগের মাস মার্চ শেষে যা ১০ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে নেমেছিল। এপ্রিলের মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের ৮২ শতাংশের বেশি রয়েছে ১০ ব্যাংকে। এর মধ্যে শুধু প্রিমিয়ার ব্যাংকের বকেয়া প্রায় ১৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি না করেও অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া আমদানি দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাঠানো হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত প্রভাবশালীরা এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। এখন আর এসব বিল পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংক। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে পণ্য দেশে আসার পরও নানা ত্রুটি দেখিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কোনো ব্যাংক বিল পরিশোধে দেরি করে। অথচ প্রতিটি এলসি হলো দায় পরিশোধের নিশ্চয়তাপত্র। বেশ আগে থেকে অপরিশোধিত বিল থাকলেও গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তা ব্যাপক বেড়ে যায়। বকেয়া বাড়লে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিদেশি ব্যাংকে এলসি কনফারমেশন চার্জ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি সরবরাহকারী পণ্য বিক্রি করতে রাজি হয় না। এ রকম অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়। কারণ ছাড়া বিল বকেয়া থাকলে এডি লাইসেন্স বাতিলের সতর্কতা দেয়। এ ছাড়া গত ২০ এপ্রিল এক নির্দেশনার মাধ্যমে ক্রটিপূর্ণ বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রকৃত কারণে বিল পরিশোধ করতে না পারলে বিদেশি ব্যাংককে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো অপরিশোধিত বিল দেখতে চায় না। তবে এর অর্থ এই নয়, জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট বিল পরিশোধ করতে হবে। বরং সব বিল নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করার জন্যই বলা হয়েছে।
কোন ব্যাংকে কত বকেয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিতে মোট বকেয়ার মধ্যে ১০ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ রয়েছে ১০ ব্যাংকে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বকেয়া প্রিমিয়ার ব্যাংকে। মূলত ব্যাংকটির নারায়ণগঞ্জ শাখার জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট বিলে বিপুল অঙ্কের এই বকেয়া তৈরি হয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে রপ্তানির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি কাঁচামাল আমদানি দেখিয়ে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে। এর আগে এভাবে সৃষ্ট বিলের বিপরীতে দেশের বাইরে অর্থ পাঠাচ্ছিল ব্যাংক। তবে বিএফআইইউর তদন্তে ভুয়া বিলের বিষয়টি ধরা পড়ার পর তা সমন্বয় করা যাচ্ছে না বলে ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, আমদানি দায় বকেয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক। গত এপ্রিল শেষে ব্যাংকটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বকেয়া ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বকেয়া এখন ১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এসব বিলের বেশির ভাগ আগের মালিকানায় যুক্তদের ভুয়া এলসি। পঞ্চম অবস্থানে থাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বকেয়া রয়েছে ৯৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া বকেয়া রয়েছে এনসিসি ব্যাংকের ৮২ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫৮ লাখ, রূপালী ব্যাংক ৫৭ লাখ, সাউথইস্ট ব্যাংক ৫৬ লাখ এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৪০ লাখ ডলার। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের অনেক ভুয়া বিল চিহ্নিত হয়েছে, যা পরিশোধ করছে না তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার পতনের পর আতঙ্কের কারণে অনেক ব্যাংক বিল পরিশোধ করছিল না। যে কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ বিল বাড়তে বাড়তে গত নভেম্বর শেষে ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর হুঁশিয়ারির পর তা কমে গত ডিসেম্বর শেষে ২০ কোটি ডলারে নেমেছিল। জানুয়ারিতে আরও কমে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে আসে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে সামান্য বেড়ে হয় ১০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং মার্চ শেষে ১০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এপ্রিল শেষে আরও বেড়েছে। আমদানি বিলের বকেয়া কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২০ এপ্রিল এক নির্দেশনার মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের দায় পরিশোধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।