শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ ট্রাম্পের, পরিস্থিতি সামলে নিলেন রামাফোসা
Published: 22nd, May 2025 GMT
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা ও তাদের জমি দখলের মিথ্যা অভিযোগ করেন। তবে বাকবিতণ্ডায় না জড়িয়ে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন রামাফোসা।
বুধবার হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিবিসির।
ওভাল অফিসে দুই নেতা মধ্যে বৈঠকটি হাসি মুখে শুরু হলেও কিছুক্ষণ পর তা উত্তেজনায় রূপ নেয়। ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গের বিরুদ্ধে নিপীড়নের খতিয়ান মেলে ধরেন। একপর্যায়ে একটি ভিডিও চালিয়ে দেন এবং ছাপানো খবরের কিছু কাটিং উল্টে-পাল্টে দেখাতে থাকেন। এসব নিজের অভিযোগের পক্ষের প্রমাণ বলে দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
রামাফোসার কাছে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জমি দখল করে নেয়া হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের হত্যা করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প যে ভিডিওটি প্রদর্শন করেছেন, তা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ধারণ করা। এটি ধারণ করার এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি খামারে দু’জন নিহত হয়েছিল। এর প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে- দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার, জরুরি মার্কিন সহায়তা বাতিল, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু আফ্রিকানারদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে করা গণহত্যার মামলার সমালোচনা।
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে আসার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন রামাফোসা। তবে ট্রাম্পের সাজিয়ে রাখা পূর্বপরিকল্পনা ধরতে পারেননি রামাফোসা।
ওভাল অফিসে বৈঠকের সময় ট্রাম্পের একের পর এক অভিযোগ উত্থাপনের সময় পাশের চেয়ারে রামাফোসা শান্ত ও স্থিরভাবে বসে সংযতভাবে প্রতিবাদ জানান। বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের একটি। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে নিহত বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।