পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পশ্চাৎভূমি বা হিন্টারল্যান্ড হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ওই অঞ্চলের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হতে পারে, এমনকি সেখান থেকে কাঁচামাল এনে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন করেও রপ্তানি করা যেতে পারে।

আজ সোমবার রাজধানীর বনানীতে অর্থনৈতিক করিডর ও দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় আলোচনা সভাটি আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সম্পদ। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অনেক বাঁশ, বেতসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সেগুলো আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি সুযোগ করে দিতে পারি। সবচেয়ে ভালো হয়, সেই কাঁচামালগুলো চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা গেলে। তাতে দুই দেশের জন্যই ভালো হবে।’

তবে এ জন্য অনুকূল ভূরাজনৈতিক পরিবেশ আগে তৈরি করতে হবে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সেটি করা গেলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সুবিধাজনক জায়গায় হতে পারে। এ জন্যই আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পরিকল্পনা করছি, প্রকল্প নিয়েছি।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘করিডরের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়, তবে এর আগে দেশের অভ্যন্তরের যোগাযোগব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে অপব্যয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে অসংখ্য প্রকল্প আমরা পেয়েছি। আমরা এ বছর যে উন্নয়ন বাজেট করতে যাচ্ছি, সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০টির মতো প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশই বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া প্রকল্প। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ করতে গিয়েই আমাদের অর্থ চলে যাচ্ছে। ফলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ অন্যান্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ সীমিত।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে অতীতে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। যেমন গাজীপুর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ নথিপত্রে ৯৫-৯৮ শতাংশ শেষ দেখানো হয়েছে। কিন্তু এটি ভুলভাবে নকশা করা হয়েছিল। প্রকল্পটি ৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে শুরু হয়েছিল; কিন্তু নকশায় ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি শেষ করতে এখন আরও তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, এ ধরনের আরও প্রকল্প রয়েছে। যেমন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত একটি বিশ্বমানের এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙ্গার পরে আর যাওয়ার জায়গা নেই। পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীদের পারাপারে অনেক সুবিধা হয়েছে। কিন্তু এটি তৈরির খরচ বিবেচনায় ওই অঞ্চলে সেভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়া আমরা সামনের দিকে এগোতে পারব না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং আমাদের সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।’ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ নিয়ে অনেক ভুল–বোঝাবুঝি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের জন্য আরও সময় নেওয়া উচিত, নাকি এখনই করা উচিত—এ নিয়ে নানা মত রয়েছে, অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে।

প্যানেল আলোচনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমরা প্রায় সময় বড় অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু ব্যবসার পরিবেশ উন্নত না করে, শুধু অবকাঠামো দিয়ে সামনে আগানো যাবে না। আমাদের রপ্তানি খাত শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে আছে। অথচ দশকের পর দশক ধরে চামড়া খাতে সমস্যা সমাধান হয়নি।’ দেশে রপ্তানিমুখী বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়ানো আবশ্যক বলে জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যার কারণে বিদ্যমান কারখানাই চালাতে পারছি না, সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ কী করে আসবে।’

অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের কথা বলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো.

মাহবুব উর রহমান।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে নতুন বিনিয়োগ আসছে না বললেই চলে, যা আসছে তার বেশির ভাগই পুনর্বিনিয়োগ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প অবক ঠ ম উপদ ষ ট আম দ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ