যেকোনো কর্মদিবসে রাজধানীতে সকালের দিকে যানজট বেশি থাকে। যানজট সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্তই বেশি থাকে সাধারণত। তবে এমন সময়েও রাজধানীর বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে এমন যানজট থাকে না আজ বুধবার সকালে যেমন ছিল। বিজয় সরণি থেকে সামনে এগিয়ে একেবারে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত শুধু যানবাহনের সারি। গাড়ি একটুও সরছিল না। এটা সকাল ৯টার ঘটনা।

ফার্মগেট পুলিশ বক্সের কাছে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলছিলেন, এই জ্যাম শাহবাগ পর্যন্ত। সেখানে একটা সমাবেশ হচ্ছে, সে জন্য পুরো এলাকায় জ্যাম।

এরপর সারা শহরে যানজট ছড়িয়ে গেছে। বেলা একটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় যানজট তীব্র আকার নেয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো.

সরওয়ার আজ বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে আজ ছাত্রদল ও যুবদলের তারুণ্যের সমাবেশ আছে। সেখানে কয়েক লাখ লোক আসার কথা। এ জন্য গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে বাসে নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে আসছেন। নগরীর আশপাশ থেকেও বাসভর্তি লোকজন আসছেন। শুধু  মিরপুর ও উত্তরার কিছু অংশ বাদ দিয়ে পুরো নগরেই আজ যানজট।

মো. সরওয়ার বলেন, আজ সকালে জামায়াতের নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর শাহবাগে বিপুলসংখ্যক লোক জড়ো হন। তখন সেখানে যানজট শুরু হয়, এটাই শুরু। এরপর ছাত্রদলের সমাবেশের পর এটা আরও বেড়েছে। দুই রাজনৈতিক সমাবেশের কারণেই এত যানজট আজ নগরে।

কারওয়ান বাজারের সামনে দিয়ে যাওয়া এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি। উঁচু একটি ভবন থেকে দেখা যায়, আটকে থাকা বাসগুলো থেকে অনেকেই পায়ে হাঁটা শুরু করেছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, নগরে ঢোকার সব কটি স্থানে আজ অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। আর এটা সামলাতে ডিএমপির উপকমিশনার থেকে শুরু করে পরিদর্শকদের সবাই মাঠে আছেন। যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী নাদিম মাহমুদ আটকে আছেন মগবাজার এলাকায়। তিনি বলেন, ‘সকালে শাহবাগে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন মগবাজারে এসে দেখছি রিকশাও নড়ছে না, গাড়ি তো একেবারেই বন্ধ।’

ট্রাফিক সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা খুব একটা নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল

বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।

শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।

বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।

গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলাম

স্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।

আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • শাকসু নির্বাচন : দলীয় প্রভাবমুক্ত শিক্ষকদের নির্বাচন কমিশনে রাখার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার