অর্ধেক বিশ্ব অতিরিক্ত ১ মাস তীব্র তাপদাহের মুখোমুখি
Published: 30th, May 2025 GMT
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে গত এক বছরে অতিরিক্ত এক মাস তীব্র তাপদাহের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর তাপপ্রবাহের সময় বাড়ছে। শুক্রবার প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর আলজাজিরার।
এতে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে প্রতিটি মহাদেশে মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এই প্রভাব উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
গবেষকরা ২০২৪ সালের ১ মে থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে চরম তাপের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
এতে দেখা গেছে, প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ, অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ কমপক্ষে ৩০ দিন তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়কালে ৬৭টি তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা পাওয়া গেছে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই খবরের শিরোনামে হলেও তীব্র তাপপ্রবাহের বিষয়টি একটু আড়ালেই থেকে যায়। যদিও তীব্র তাপপ্রবাহই সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র তাপের সঙ্গে সম্পর্কিত মৃত্যু প্রায়ই গণনার বাইরে থেকে যায় এবং ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষণাটির সহযোগী ফ্রিডেরিক অটো বলেন, তাপপ্রবাহ নীরব ঘাতক। মানুষ তাপপ্রবাহে রাস্তায় পড়ে মারা যায় না। তারা হয় হাসপাতালে অথবা দুর্বল তাপপ্রতিরোধী বাড়িতে মারা যায়। এ জন্য তাদের দেখা যায় না।
তিনি বলেন, প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ব্যবহার, প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ এবং প্রতি ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও বেশি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত তীব্র তাপপ্রবাহের দিনগুলোয় ক্যারিবীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরুবা দ্বীপে ১৮৭টি তীব্র তাপপ্রবাহের রেকর্ড করা হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪২ দিন বেশি। নিম্ন আয়ের সম্প্রদায় এবং দুর্বল জনগোষ্ঠী, যেমন বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা তীব্র তাপে সবচেয়ে বেশি ভোগেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ মাসে মধ্য এশিয়া, ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ সুদান এবং গত জুলাইয়ে ভূমধ্যসাগরে ঘটে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া সম্ভব হতো না। গত জুলাইয়ে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর পর মরক্কোতে কমপক্ষে ২১ জন মারা যান।
রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের নগর ও অ্যাট্রিবিউশনের প্রধান রূপ সিং এক বিবৃতিতে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহ ব্যাপক আকার ধারণ করছে। ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের উন্নত প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা, কর্মপরিকল্পনা এবং নগর অঞ্চলে তাপপ্রবাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।
গবেষকরা বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ না করলে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হতে থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জলব য
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।