পারফিউম কেমিক্যালের ব্যবসায়িক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখবে বিএসইসি
Published: 30th, May 2025 GMT
পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবসায়িক সক্ষমতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গঠিত কমিটির কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্রে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে: ড.
চবিতে বিআইসিএমর বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত, এমওইউ স্বাক্ষর
বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. রফিকুন্নবী, সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক ও মো. রায়হান কবির।
আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির সার্বিক বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। তদন্তে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।’
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর বিধি ১৭ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে পরিদর্শন প্রতিবেদনের দুটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে হবে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র খতিয়ে দেখবে। এছাড়া কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের অর্থের ব্যবহার প্রসপেক্টাস এবং কমিশনের ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ জারি করা সম্মতিপত্রের সব শর্ত অনুসারে সম্পাদিত হচ্ছে কি-না তদন্ত কমিটি তা যাচাই করে দেখবে।
কোম্পানি কর্তৃক যে উদ্দেশ্যে মূলধন সংগ্রহ করেছে তাতে কোনো সংশোধন আনা হয়েছে কি-না এবং সংশোধন আনার ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি-না তা যাইচ করবে তদন্ত কমিটি।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত ত্রৈমাসিক প্রান্তিকে মূলধন সংগ্রহের অর্থের ব্যবহার প্রতিবেদনে প্রদত্ত নিরীক্ষকের মতামত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া এই বিষয়ে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৩ ও ২০২৪ সালের ৩০ জুন (জুলাই-জুন, ২০২৪) পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০২ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০২ টাকা। ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৫.৫৬ টাকা।
ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এরপর ধীরে ধীরে নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে কোম্পানিটি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে কোম্পানিকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করেছে ইউনুস গ্রুপ। কোম্পানির ৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের রয়েছেন-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে রকিবুল হাসান, পরিচালক তার স্ত্রী মাহফুজা ইউনুস এবং দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মান সন্তোষজনক এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার পর বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ পরবর্তীতে জানাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
এদিকে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের চার পরিচালক তাদের কাছে থাকা শেয়ার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিকে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার আগে পুঁজিবাজার থেকে ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এজন্য বিনিয়োগকারীদের ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করায় পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকায়। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ। কোম্পানির সংগ্রহীত ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ওয়ার্কি ওয়ার্কং ক্যাপিটাল ও ৫০ লাখ টাকা বিএমআরইর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি সংগ্রহীত টাকার ৩৭.৭৯ শতাংশ ব্যবহার করেছে। বাকি ৬২.২১ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৬৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আলোচিত ব্র্যান্ড ম্যানোলা। আশির দশকে বাংলাদেশে প্রসাধনীর বাজারে এ ব্র্যান্ড বেশ জনপ্রিয় ছিল।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র ব এসইস র কর মকর ত ব যবস থ র ব যবস র জন য র পর চ ব যবহ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে এ আলোচনা সভা শুরু হয় । এতে অংশ নেন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।
আলোচনা সভার মূল উদ্দেশ্য, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলিকে স্মরণ এবং তা থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা নেওয়া।
আরো পড়ুন:
বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে পশুপালন অনুষদে বিক্ষোভ
সাজিদের মৃত্যু নিয়ে ইবি প্রশাসনের প্রহসনের অভিযোগ
বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মুমিত আল রশিদের সভাপতিত্বে ও ছাত্র উপদেষ্টা মিসেস তানজিনা বিনতে নূরের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান। আলোচক ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার।
শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবু সালেহ। এরপর জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্মৃতিচারণমূলক অংশে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভাগের চার শিক্ষার্থী তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। জুলাইয়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তারা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং প্রগতিশীল চিন্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার বলেন, “এই আন্দোলন শুধুই জুলাইয়ের নয়—এটি ১৭ বছর ধরে চলে আসা দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অংশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেভাবে দলীয়করণ ও অপরাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল, জুলাই আন্দোলনের বিপ্লবী স্পৃহাকে যেন সেভাবে কুক্ষিগত না করা হয়, সে ব্যপারে সবার সতর্ক থাকা উচিত।”
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, “আমাদের দেশের শত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখানে সবসময়ই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়েছে। তাই ঐতিহাসিকভাবেই জাতিগতভাবে আমরা ন্যায়ের লড়াইয়ের সৈনিক।”
তিনি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে দেশের ভবিষ্যত নির্মাণে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
শেষে বিভাগীয় শিক্ষক ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. আহসানুল হাদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী