১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
Published: 31st, October 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স আইড ম মল জ হ ঙ গ র আলম স আইড র
এছাড়াও পড়ুন:
এক মাস বন্ধ থাকার পর তেল সরবরাহ আজ শুরু
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইন প্রকল্প উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যেই ধরা পড়েছে তেলের হিসাবে গরমিল, মজুতের জালিয়াতি ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি। এ কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে তেল সরবরাহ বন্ধ ছিল। অবশেষে আজ বুধবার ৫০ লাখ লিটার তেল সরবরাহের কথা রয়েছে।
বিপিসির একাধিক সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পাইপলাইনে তেল পাঠানো বন্ধ। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড পাঠায় ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ৯০৭ লিটার তেল। এর আগে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়াম পাঠায় ৭০ লাখ লিটার এবং ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর আরও ৭৫ লাখ লিটার। যমুনা অয়েল কোম্পানি ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঠায় ১ কোটি ৮ লাখ লিটার ডিজেল।
এক মাসের বেশি সময় তেল সরবরাহ বন্ধের পেছনে মূল কারণ হিসাবে তেল ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোয় পৌঁছানোর পর পদ্মা ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অন্তত ৫০ হাজার লিটার তেল কম পাওয়া গেছে। তবে সবচেয়ে বড় ঘাটতি ধরা পড়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ক্ষেত্রে। ফতুল্লা ডিপোয় দুই দফায় মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল কম পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার পর পাইপলাইনে সরবরাহ বন্ধ করা হয়।
কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। তেলের হিসাবে গরমিলও পাওয়া গেছে। কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ত্রুটি ঠিক হলে পুরোদমে সরবরাহ শুরু হবে।এ কে এম আজাদুর রহমান, পরিচালক (অপারেশনস), বিপিসিজানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস) এ কে এম আজাদুর রহমান বলেন, কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। তেলের হিসাবে গরমিলও পাওয়া গেছে। কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ত্রুটি ঠিক হলে পুরোদমে সরবরাহ শুরু হবে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তেলের হিসাবে গরমিল, ট্যাংক মজুতের সক্ষমতা জালিয়াতি ও পরিমাপে ত্রুটি ধরা পড়েছে। এসব কারণে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরবরাহ বন্ধ থাকায় তেল পুরোনো পদ্ধতিতেই—নদী, রেল ও সড়কপথে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে, অপচয় ও চুরির ঝুঁকি ফিরেছে পুরোনো অবস্থায়।
২০১৬ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু হয়। এরপর ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সেনাবাহিনী, কিন্তু এখনো বিপিসি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প বুঝে নেয়নি। অর্থাৎ সম্পূর্ণ হস্তান্তরের আগেই বিপুল ব্যয়ে নির্মিত পাইপলাইন চালু করা হয়। ফলে সরবরাহ শুরু হলে ধরা পড়ে গলদ।
দেশে বছরে গড়ে ৬৫ লাখ টন তেলের চাহিদা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ ছিল ৬৮ লাখ টন, যার ৬৩ শতাংশ ডিজেল। পাইপলাইন চালু থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে ২৭ লাখ টন বা ৩১৭ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।
দেশে বছরে গড়ে ৬৫ লাখ টন তেলের চাহিদা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ ছিল ৬৮ লাখ টন, যার ৬৩ শতাংশ ডিজেল। পাইপলাইন চালু থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে ২৭ লাখ টন বা ৩১৭ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।বিপিসি সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগেই ব্যবহৃত হয় দেশের ৪০ শতাংশ তেল। এখন পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের ডিপো, সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় পৌঁছায়। মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ লাগে। বছরে পরিবহন বাবদ খরচ হয় ২০০ কোটি টাকার মতো। এই ব্যয় কমাতে, চুরি ও অপচয় ঠেকাতে, এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহ গড়তে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।
 রাকসুর ২৩ পদে কার সঙ্গে কার লড়াই হলো, জয়ের ব্যবধান কত
রাকসুর ২৩ পদে কার সঙ্গে কার লড়াই হলো, জয়ের ব্যবধান কত