খুলনা নগরীর দৌলতপুর মীনাক্ষী সিনেমা হল মোড়টি পড়েছে খুলনা-যশোর মহাসড়কে। এর এক পাশে দৌলতপুর বাজার। অন্য পাশের সড়কটি গেছে দেয়ানা এলাকার দিকে। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ের দুই পাশেই যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহেন্দ্রার মতো যানবাহন। ফলে এখানে যানজট লেগে থাকে। 
একই দৃশ্য দৌলতপুর বিএল কলেজ মোড় থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড ও মীনাক্ষী হলের মোড় হয়ে মহসীন মোড় পর্যন্ত। নগরীর অন্যান্য মোড়ের চিত্রও ভিন্ন নয়। প্রতিদিনই এসব মোড়ে দেখা যায় যানবাহনের বিশৃঙ্খলা। অনেক সময় হেঁটে চলার পথে যেতেও বেগ পেতে হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের।
আইনজীবী সমিতির সামনে যে সড়কটি, এর দুই পাশেই অসংখ্য রিকশা ও ইজিবাইক থামিয়ে রাখা। সড়কের ওপর যানবাহনের জট দেখা যায়, নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের ৫ পাশে ও ডাকবাংলো মোড়ের ৬ পাশে। বৃহস্পতিবার ময়লাপোতা মোড়ে রাস্তায় তৃতীয় সারিতে রিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলছিলেন চালক আব্দুল মজিদ। মাঝ রাস্তার হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, যাত্রী যাওয়ার জন্য ইশারা দিয়েছেন। দ্রুত না দাঁড়ালে যাত্রী অন্য রিকশায় চলে যাবেন, সে জন্য দাঁড়িয়েছেন।
রূপসা ট্রাফিক মোড়ে সম্প্রতি দেখা যায়, দুই পাশেই সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে ইজিবাইক, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাখা। চালকরা যাত্রী ওঠাতে ব্যস্ত। শিববাড়ী মোড়ে দেখা যায়, জিয়া হলের সামনে, দোকানপাটের সামনে, পুলিশ বক্সের সামনে ও খুলনা-যশোর মহাসড়ক মোড়ের বেশির ভাগ জায়গায় নানা যানবাহন থামিয়ে রাখা। এই পুরো এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নাজেহাল ৪-৫ ট্রাফিক পুলিশের সদস্য।
শিববাড়ী মোড়ে বৃহস্পতিবার রাস্তার মাঝেই যাত্রী তুলছিলেন ইজিবাইক চালক আলম হাওলাদার। এ জন্য পাশের তিনটি সারি পার করে এসেছেন তিনি। এখানে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি একা দাঁড়িয়েছি, অন্যরাও দাঁড়িয়েছে তা দেখেন না?’
নগরীর পিটিআই মোড়, টুটপাড়া মোড়, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, হাদিস পার্কের মোড়, কেসিসি 
সুপারমার্কেটের সামনে, পিকচার প্যালেস মোড়ের চারপাশে, ফেরিঘাট মোড়, পাওয়ার হাউস মোড়, মৌলভীপাড়া মোড়, সাতরাস্তা মোড়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, বয়রা বাজার মোড়, নতুন রাস্তার মোড়, শান্তিধাম মোড়, নিরালা মোড়, জিরো পয়েন্ট, ফুলবাড়ি গেট মোড়ের দৃশ্য প্রতিদিন একই রকম। 
বৃহস্পতিবার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল মোড়ে দেখা যায়, সোনাডাঙ্গা থানার সামনে ও বিপরীত পাশে বিভিন্ন রুটের বাসে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে রিকশা ও ইজিবাইক। সেখানেই কথা হয় মোহাম্মদ জামান নামের এক বাসযাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মোড়ে রাস্তার ওপর বাস, রিকশা, ইজিবাইক দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। ফলে যানজটে পড়লে মোড় পার হতে ৫-১০ মিনিট সময় লেগে যায়।
সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা যায় নগরীর ক্লে রোডে। অপ্রশস্ত এই সড়কের ডাকবাংলো মোড় থেকে বড় বাজার পর্যন্ত দুই পাশেই থামিয়ে রাখা যানবাহনের জন্য হেঁটে চলাও কঠিন। গল্লামারী সেতুর উভয় পাশে সড়কের অর্ধেকজুড়ে একই পরিস্থিতি। ফলে অন্যান্য যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্র 
জানায়, নগরীর ১৭ হাজার রিকশার নিবন্ধন রয়েছে। নিবন্ধিত ইজিবাইকের সংখ্যা ৮ হাজার। প্রতিদিন চলাচল করছে কয়েক হাজার বেশি। এর বাইরেও প্রতিদিন ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, ফুলতলা ও রূপসা উপজেলা থেকে অসংখ্য ইজিবাইক ঢুকছে 
নগরীতে। অধিকাংশ মোড়ে এসব যানবাহনের অবস্থানের শৃঙ্খলা নেই। সারিবদ্ধভাবে রাখার বিষয়টিও দেখভাল করেন না কেউ। 
নিরাপদ সড়ক চাই খুলনার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, চালকরা বেপরোয়াভাবে সড়কে এসব যানবাহন পরিচালনা করেন। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ। নগরীতে ২৫ হাজার রিকশা ও ইজিবাইকের নিবন্ধন থাকলেও তাঁর ধারণা, চলাচলকারী এসব যানবাহনের সংখ্যা অন্তত ৪০ হাজার।
সড়কের এমন বিশৃঙ্খলায় ক্ষুব্ধ খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো.

বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, চালকদের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়েছে। আবার এগুলো নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশেরও গাফিলতি রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার সুদর্শন কুমার রায়ের ভাষ্য, তিন চাকার যানবাহনের চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন বিষয়ে ধারণা কম। এ ছাড়া তারা যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতায় থাকে। তাই মোড়ে মোড়ে বিশৃঙ্খলা। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সার্জেন্ট ও কনস্টেবলরাও চালকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে ২৮ এপ্রিল থেকে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক চ লকদ র র স মন সড়ক র নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

১১ কোটি টাকার প্রকল্পে ধীরগতি, ২০ গ্রামে দুর্ভোগ

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার-পতনঊষার সড়কের দুই কিলোমিটার অংশের কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় অধিবাসী। খানা-খন্দে ভরা সড়কের এ অংশ সংস্কারে একটি প্রকল্প হাতে নিলেও তা যেন শেষ হতে চাইছে না।
টেংরাবাজার-পতনঊষার সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের জন্য ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এই সড়কের কারণে তিনটি উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার-কমলগঞ্জের পতনঊষার সড়ক প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ সড়কের একটি শাখা কুলাউড়ার টিলাগাঁও ও হাজীপুর ইউনিয়নের দিকে চলে গেছে। যার কারণে সড়কের এই অংশ চলাচলে অধিক ব্যবহার করেন রাজনগরের কামারচাক, কমলগঞ্জের পতনঊষার, কুলাউড়ার টিলাগাঁও ও হাজীপুর ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের বাসিন্দা। জেলা সদর ও সিলেট যাতায়াতে এ সড়কটি তাদের প্রধান মাধ্যম।
বিশেষ করে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা বর্ষা-বাদলে চলাচলে মহাবিপাকে পড়ছেন। এদিকে ওই সড়কের তারাপাশা বাজার অংশে হাঁটুসম গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অথচ এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীন এ সড়কের হরিপাশা থেকে তারাপাশা বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার জায়গা মেরামতে ঠিকাদার গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তারাপাশা বাজারে আসা মশাজান গ্রামের আলকাছ মিয়া বলেন, এ রাস্তা দিয়ে শুধু রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করেন না। কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানুষ এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। এলাকার মানুষকে দুর্ভোগের কবল 
থেকে বাঁচাতে তাড়াতাড়ি সড়কটি মেরামত জরুরি। একই গ্রামের জিলাল মিয়া জানান, অসুস্থ রোগী বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার উপায় নেই। 
এলজিইডি রাজনগর উপজেলা প্রকৌশলী রাজু সেন সমকালকে বলেন, ১১ কোটি টাকার প্রকল্পের কিছু অংশ অসম্পূর্ণ। ঠিকাদারকে কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। 
এদিকে এই সড়ক সংস্কার প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুহিবুর রহমান জানান, তারাপাশা বাজারে জনস্বার্থে ১৪ ফুটের স্থলে ১৮ ফুট আরসিসি ঢালাই করা প্রয়োজন। বর্ধিত কাজের জন্য ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করা হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১১ কোটি টাকার প্রকল্পে ধীরগতি, ২০ গ্রামে দুর্ভোগ
  • উদ্বোধনের আগেই বিলীনের পথে মেরিন ড্রাইভ
  • লংগদু-নানিয়ারচর সড়কের দাবিতে রাজপথে উপজেলাবাসী
  • গতি কম, ভোগায় বেশি