রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মায়ের করা অপমানের প্রতিশোধ নিতে তার ছেলেকে পাটখেতে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সোহেল রানা (২৮) নামে এক যুবককে আটক করেছে। আটক সোহেল পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহরি গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান জানান, শুক্রবার ভোরের দিকে উপজেলার লক্ষ্নীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকার একটি পাটখেত থেকে জিসান হোসেন রহিম (৮) নামে হাফেজি মাদ্রাসার ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সন্দেহভাজন আটক সোহেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত সোহেল রানা প্রায় দুই বছর ধরে গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার মেশিন চালাতেন। এই সুবাদে তার সঙ্গে চেংমারী গ্রামের জিসানের মা জেসমিন আরার পরিচয় থেকে সখ্যতা হয়। এরপর সোহেল তার উপার্জনের টাকা জেসমিনের কাছে জমা রাখতেন। সম্প্রতি জমা রাখা প্রায় ৫০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে জেসমিন তাকে টাকা না দিয়ে সবার সামনে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং অপমান করেন। এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে সোহেল জেসমিনের ছেলে জিসানকে মাদ্রাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে মায়ের করা অপমানের প্রতিশোধ নিতে তার ছেলেকে পাটখেতে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর তিনি লালমনিরহাটে নিজ বাড়িতে পালিয়ে যান।

এদিকে, রাত গভীর হলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জিসানকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এসময় এক ছাত্র জানায়, জিসানকে মামা সম্পর্কের এক ব্যক্তি নিয়ে গেছেন। এই তথ্য পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সোহেলের বাড়িতে যান এবং তার কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ সোহেলকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে তার দেখানো স্থানে গিয়ে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ রেজাউল করিম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এক শিক্ষক দেখতে পান জিসান  রুমে নেই, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারকে জানানো হয়। এরই মধ্যে এক ছাত্র জানায়, তাকে তার এক আত্মীয় (মামা সম্পর্কে) নিয়ে গেছেন।’

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, অভিযুক্তের দেখানো স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য মরদ হ অপম ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে

তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে বাসিন্দাদের সুপেয় পানির প্রধান উৎসটি দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক বেহজাদ পারসার বরাত দিয়ে আইআরএনএর খবরে বলা হয়, তেহরানে খাবার পানি সরবরাহের পাঁচটি উৎসের একটি আমির কবির বাঁধ। সেটিতে এখন মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি আছে। এটি জলাধারটির মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।

বেহজাদ পারসা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই পরিমাণ পানি দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহ তেহরানের খাবার পানির চাহিদা মেটানো যাবে।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মোকাবিলা করছে ইরান। গত মাসে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, তেহরান প্রদেশে এবার বৃষ্টির যে মাত্রা, তেমনটা গত এক শতাব্দীতে খুব একটা দেখা যায়নি।

এক কোটির বেশি মানুষের নগর তেহরান তুষারাচ্ছন্ন আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ৬০০ মিটার (১৮ হাজার ৩৭০ ফুট) পর্যন্ত। এই পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদীগুলো বহু জলাধারে পানির জোগান দেয়।

বেহজাদ পারসা বলেন, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ করা বাকি জলাধারগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই কর্মকর্তা।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।বেহজাদ পারসা, তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক

পানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বারবার সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর চলতি গ্রীষ্মে ঘন ঘন পানি সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

জুলাই ও আগস্টে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইরানে সে সময় তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।

ওই দুই মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়ে গিয়েছিল।

জুলাই ও আগস্ট মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে ছিল।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পানিসংকট পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর।’

ইরানজুড়ে পানিসংকট একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ব্যবহারে অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারকে পানি ঘাটতির জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনপ্রচণ্ড গরমে পানির ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ইরানিদের কম পানি ব্যবহারের আহ্বান২০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ