জীবিত ভাইকে 'জুলাই আন্দোলনে শহীদ' দেখিয়ে মামলা
Published: 31st, May 2025 GMT
জীবিত সোলাইমান হোসেন সেলিমকে (৫০) ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ’ দেখিয়ে মামলা করেছেন তারই বড় ভাই গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু (৫২)। গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় সেই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সেলিম ফুলবাড়িয়া উপজেলার ধামর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তার ধামর বেলতলি বাজারে একটি মুদিদোকান রয়েছে। ‘গত বছরের ৩ আগস্ট রাজধানীর কাজলা পেট্রোল পাম্পের সামনে সেলিম গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন’—এমন অভিযোগ এনে মস্তু ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার সাক্ষী হিসেবে তাদের দুই সহোদর হেলাল উদ্দিন (৫৫) এবং আবুল হোসেনকে (৫৪) দেখানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বাবা আব্দুল হাকিমের মৃত্যুর পর থেকেই ভাইদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেলিমের শুধু দুই কন্যাসন্তান থাকায় তার ভাগের সম্পত্তিতে নজর পড়ে বাকি তিন ভাইয়ের। এদিকে দুটি হত্যাসহ চারটি মামলায় জড়িয়ে আর্থিকভাবে নিঃস্ব মস্তু পূর্বপরিকল্পিতভাবে সেলিমকে নিয়ে মিথ্যা মামলা করেন।
এ বিষয়ে সেলিম বলেন, ‘মস্তু এলাকায় একজন চিহ্নিত ডাকাত এবং তিনি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গত ১৫ বছর ধরে মস্তু বাড়িতে আসে না। বাড়িতে না এলেও বাকি দুই ভাইকে দিয়ে আমার সম্পত্তি গ্রাস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মস্তু। আমার কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় তারা আমাকে সব সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে। তাদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে আমি ধামর বেলতলি বাজারে আড়াই শতক জমি কিনে বাড়ি ও দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছি। বাবার ভিটায় গেলেই ঝগড়া হয়, তাই যাওয়া হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাকে মামলায় মৃত দেখিয়েছে, সুযোগ পেলেই হয়তো মেরেই ফেলত। বিষয়টি বুঝতে পেরে এখন আমি সতর্ক। কিন্তু পুলিশ কীভাবে একটি মিথ্যা মামলা নিল বুঝতে পারছি না। মামলার কারণে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমাকে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে আমি বেঁচে আছি। এই পর্যন্ত পাঁচবার যাত্রাবাড়ী থানা এবং ডিবি অফিসে গিয়েছি।’
সেলিমের স্ত্রী হাজেরা খাতুন জানান, ‘সেলিমকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার তিন ভাই এই নাটক সাজিয়েছে। এর আগেও তারা সেলিমের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তখন এলাকাবাসীর সহায়তায় আমার স্বামী প্রাণে বাঁচেন। এ ঘটনায় সেলিম ২০২২ সালে হেলাল উদ্দিন এবং আবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন।
সেলিমকে নিহত দেখিয়ে মামলা করার বিষয়ে তার ভাই হেলাল উদ্দিনের মেয়ে ঝুমি আক্তার বলেন, বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হওয়ায় প্রায় ১৫ বছর ধরে কাকা মস্তু বাড়িতে আসেন না। বর্তমানে তিনি রাজধানীতে বাস চালান। শুনেছি মামলা হয়েছে, কিন্তু বাবাকে কেন সাক্ষী করা হলো জানি না। আমরা এই ঘটনার জন্য দায়ী নই। মস্তু কাকা এসব করলে করতেও পারে।’
মামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্য সচিব আলী হোসেন সমকালকে বলেন, আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেলিমের পাশে আছে এবং প্রয়োজনে তার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য—কোনো মানুষ যেন মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার না হয় এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণেই জীবিত সেলিমকে মৃত দেখিয়ে তার ভাই মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, মস্তু এলাকায় একজন ডাকাত বলে পরিচিত। তার নামে দুটি হত্যা, একটি চাঁদাবাজি এবং একটি মারামারির মামলা রয়েছে। শুনেছি তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে এলাকায় আসেন না। তবে সেলিমের জমিজমা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্যই হয়তো এই মামলাটি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে মামলার বাদী মস্তু নিরুদ্দেশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সেলিম মৃত নন, এটা নিশ্চিত করতে আদালতের মাধ্যমে দুই ভাইকে সামনা-সামনি করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আদালত অনুমতি দিলে সিআইডি ডিএনএ পরীক্ষা করবে। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলাটির তদন্ত কাজ আমি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। মামলার বাদী মস্তুর বিরুদ্ধে অন্য মামলা থাকায় তিনি পলাতক।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ র জন য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত
দেশের পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক।
সোমবার (৩ নভেম্বর) ডিবিএ’র সেক্রেটারি মো. দিদারুল গনী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন
ডিএসইতে সূচক কমলেও সিএসইতে বেড়েছে
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে মোট ১৫ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ১২ জন পরিচালক।
নির্বাচিতরা আগামী ২ বছর (২০২৬ ও ২০২৭) ডিবিএ‘র নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচিত সদস্যরা ডিবিএ’র আসন্ন বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
অন্যান্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মো. মনিরুজ্জামান, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মো. নাফিজ-আল-তারিক ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়া পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন–এবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাফিউজ্জামান বোখারী, এস সি এল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইফতেখার জোনায়েদ, আর এন ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাদিম, আজম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কবির মজুমদার, নিউ এরা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরওয়াই শমসের, ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও আমিনুল ইসলাম, জি এম এফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ নাহিদ আহমেদ, কাইয়ুম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈম মো. কাইয়ুম, ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এক্সপো ট্রেডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ওসমান গনি চৌধুরী, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার শফিকুর রহিম ও এসএআর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান।
ঢাকা/এনটি/মেহেদী