সুনামগঞ্জে গত দুই দিন ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ কারণে নদী ও হাওরে পানি অনেকটা স্থিতিশীল আছে। তবে সুরমা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আবার ভারী বৃষ্টি সঙ্গে উজানের পাহাড়ি ঢল নামলে বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা আছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৯৭ মিটার। একই স্থানে গত রোববার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৮৬ মিটারে। বর্ষা মৌসুমে এখানে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৮০ মিটার। সুনামগঞ্জে সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩০ মিলিমিটার। চেরাপুঞ্জিতে এই সময়ে বৃষ্টি কম হয়েছে।

এদিকে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানিতে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের অলইতলী গ্রামের সড়ক ভেঙে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকেছে নদীতীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে। কুশিয়ারার তীরবর্তী এলাকায় গ্রামীণ সড়ক ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীসহ লোকজন যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
স্থানীয় কদরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়া রাস্তাঘাট ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সড়কে পানি উঠে গেছে।

পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নজমুদ্দিন বলেন, কুশিয়ারার পানি বেড়ে জগন্নাথপুর–বেগমপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কসহ অনেক বাড়িতে হাঁটুসমান পানি আছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরকত উল্লাহ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। তবে এখনো কেউ তাতে আশ্রয় নেননি।’

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে উজানের পাহাড়ি ঢল নামলে প্রথমেই জেলার সীমান্তবর্তী ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এই পাঁচ উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে বেশি। ছাতক উপজেলার নদ-নদীগুলো পানিতে টইটম্বুর। এখন ভারী বৃষ্টি হলেই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও পানি আছে। তবে গত দুই দিন সুনামগঞ্জ ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় উজানের ঢল কম নেমেছে। মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমেছে।

সদর উপজেলার হাসনবাহার গ্রামের বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, সামনে ঈদ। এই কদিন বৃষ্টিতে পশুরহাটগুলো জমেনি। আর তিন দিন বাকি, যদি আবহাওয়া ভালো না থাকে, তাহলে অনেক গরু ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়বেন।

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মামুন হাওলাদার বলেছেন, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। পানি আবারও বাড়তে পারে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে বড় কোনো বন্যা আপাতত হবে না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আমরা এর আগে ৭২ ঘণ্টা সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এখন মনে হয় এটির দরকার নেই। তবে পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনায় আমাদের প্রস্তুতি আছে।’

সুনামগঞ্জে গত ২০ মে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। শুরুতে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হয়। যে কারণে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। পানি বাড়তে থাকে নদী ও হাওরে।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল, কম বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তি০২ জুন ২০২৫আরও পড়ুনসুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বাড়ছে০১ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ পর স থ ত নদ র প ন উপজ ল র র উপজ ল নদ নদ

এছাড়াও পড়ুন:

গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন

টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’

শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’

গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।

স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’

টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’

তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ