বাস্তুচ্যুত ও ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেই যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। দুর্ভিক্ষের মুখে পড়া গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা এখন ক্ষুধায় কাতর। তারা খাবার পাওয়ার আশায় ইসরায়েল পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ছুটে আসছেন। খাবার নিতে এসে গুলিতে লাশ কিংবা পঙ্গু হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। গত আট দিনে দখলদাররা ত্রাণকেন্দ্রে গুলি চালিয়ে ১০২ ক্ষুধার্তকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন অনন্ত ৪৯০ জন। গাজার ত্রাণকেন্দ্র ঘিরে বয়ে যাচ্ছে রক্তস্রোত। 

অন্যদিকে, গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের হামলায় তিন ইসরায়েলি সেনা নিহত ও দুই সেনা আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক ও শ্রম অধিকারবিষয়ক সংস্থা আইএলও ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবারও রাফায় একটি ত্রাণকেন্দ্রে গুলি চালিয়ে ২৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল। এর আগে রোববার এই এলাকায় ৩১ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। এতে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আহত  হন। 

প্রত্যক্ষদর্শী ৫০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ইয়াসের আবু লুবদা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা রাফায় সাহায্যের জন্য অপেক্ষারত ছিলাম। স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে ত্রাণকেন্দ্র এলাকায় গুলি চালানো হয়। তিনি চোখের সামনে বেশ কয়েকজনকে প্রাণ হারাতে ও আহত হতে দেখেছেন। খান ইউনিসের বাস্তুচ্যুত নারী নেইমা আল-আরাজ বলেন, ‘না খেয়ে মারা গেলেও আমি আর ত্রাণকেন্দ্রে যাব না। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে অনেকে শহীদ হয়েছেন। কেন্দ্রে পৌঁছাতে সক্ষম হলেও আমি খালি হাতে ফিরে আসি। কারণ, সেখানে কোনো খাবার ছিল না।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ত্রাণকেন্দ্রে হামলার স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এএফপিকে বলেন, ত্রাণকেন্দ্র ঘিরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে হামলা  হচ্ছে, তা যুদ্ধাপরাধ। 

গত ২৪ ঘণ্টায় গুলি-বোমায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৫ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ হাজার ৫১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ২৪ হাজার ৯০১ জন। এ বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে তীব্র বোমাবর্ষণে ৪ লাখ ৩৬ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত  হয়েছেন।
 
পরিবার নিয়ে কঠোর সংগ্রাম গাজাবাসীর

গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরের দমবন্ধ তাঁবুর মধ্যে পরিবার নিয়ে থাকেন ৩০ বছর বয়সী রানিম আবু আল-ঈশ। এক তাঁবুর মধ্যেই বাস করেন পরিবারের সাত সদস্য। যুদ্ধ পরিবারটিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। পরিবারের অপর সদস্য রানিমের দুই বোন ভুগছেন নানা রোগে। তারা দু’জনই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। যুদ্ধের আতঙ্ক ও বাস্তুচ্যুতির চাপ তাদের জীবনে নেমে এসেছে এক বিপর্যয়। এরই মধ্যে গোটা পরিবার সামলাতে হয় রানিমকে। 

তাঁবুতে দুপুরে প্রচণ্ড রোদ প্রবেশ করে এবং রাতে নেমে আসে তীব্র ঠান্ডা। এই তাঁবুর মধ্যে পারিবারিক গোপনীয়তা বলতে কিছুই নেই। মাঝে মাঝেই ইসরায়েলি বাহিনীর হয়রানি তো আছেই। রানিম বলেন, খাবার বলতে আছে শুধু গমের আটার রুটি। ত্রাণ সংস্থা থেকে পাওয়া যায় সামান্য পরিমাণ ময়দা। ওষুধপত্র পাওয়া এখানে অসম্ভব।   


  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হত য ত হয় ছ ন ইসর য় ল পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত