অযত্ন-অবহেলার পরও দাঁড়িয়ে আছে ভোলার হাজার কোটি টাকার ডাবের অর্থনীতি
Published: 4th, June 2025 GMT
ভোলা সদর উপজেলার আলীয়া মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দা আবদুল মতিন। বাড়ির আশপাশে তাঁর ১৫টির মতো ডাবের গাছ আছে। কয়েক বছর আগেও তাঁর প্রতিটি গাছে শতাধিক ডাব ধরত। গাছ লাগানোর পর কখনো যত্ন নেননি উল্লেখ করে আবদুল মতিন বলেন, এখন ২০-৩০টির বেশি ধরছে না।
তবে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেল তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আড়ালিয়া দত্তপাড়ার বাসিন্দা হিরণ চন্দ্র দের কাছে। তাঁর বাড়িতে শতাধিক নারকেলগাছ আছে। তিনি বছরে তিন দফায় ডাব বিক্রি করেন। গাছের গোড়ায় জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। এ কারণে তিনি তিন দফায় একটি গাছ থেকে ১৫০-১৬০টি কচি ডাব বিক্রি করতে পারেন। এসব ডাব তিনি ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। গরম পড়লে ডাবের চাহিদা বাড়ে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ভোলা জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে নারকেলগাছ আছে। ২৪৭ শতকে এক হেক্টর হিসেবে মোট জমির পরিমাণ ৩৯ লাখ ৫২ হাজার শতক। প্রতি শতকে গড়ে ৪টি নারকেলগাছ হিসাবে মোট গাছের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ। একটি গাছে বছরে গড়ে ৭০টি নারকেল ধরছে। যা বিগত সময়ের থেকে কম। এ হিসাবে জেলায় বছরে প্রায় ১১০ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার নারকেলের ফলন হচ্ছে। গড়ে একটি নারকেলের দাম ১০০ টাকা ধরলেও ১১ হাজার ৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ডাব–নারকেলের ফলন হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোলায় ডাব বা নারকেলের ফলন আরও বাড়ত; কিন্তু রোগবালাই, নদীভাঙন ও অযত্ন-অবহেলার কারণে দিন দিন ফলন কমছে। ভোলায় নারকেলগাছের যত্ন নেওয়ার জন্য সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। কৃষকেরাও জানেন না কীভাবে নারকেল গাছের যত্ন নিতে হয়। রোগবালাইয়ের চিকিৎসা ও নিয়মিত সার প্রয়োগ করলে ভোলায় আরও বেশি ফলন হতো।
অযত্নে পোকার আক্রমণ, ভাঙনেও কমছে উৎপাদন
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, কোনো গাছে ৬ থেকে ৭টি, কোনোটিতে ৯০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ডাব ধরে আছে। অনেক গাছে একদমই নেই। এসব গাছের পাতার উপরিভাবে কালো ছাতা পড়া দাগ দেখা গেছে। পাতার ভেতরের দিকে সাদা সাদা ছোপ ছোপ মাকড়সার জালের মতো বাসা দেখা যায়। কৃষি অফিস বলছে, উপরিভাগে কালো ছাতাপড়া দাগ হচ্ছে ছত্রাক। আর সাদা ছোপ ছোপ দাগগুলোর একটি ‘হোয়াইট ফ্লাই’ নামের পোকার বাসা। আরেকটি মাইট নামের মাকড়ের বাসা। এসব পোকামাকড় ও ছত্রাক নারকেলের পাতার রস টেনে খেয়ে ফেলার কারণে পাতা সূর্য থেকে খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে বলে জানান কৃষিবিদেরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডাবের আকার আগের চেয়ে ছোট হয়ে আসছে। গায়ে ও মুখের কাছে চিরিচিরি দাগও পড়েছে। গাছের মালিকেরা বলছেন, আগের মতো নারকেল ধরছে না। আগে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে বছরে শতাধিক নারকেল ধরত।
চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড়ের বাসিন্দা নাছিউর রহমান বলেন, তাঁর নিজের ১৭৫টি এবং তাঁর পরিবারের ৫ শতাধিক নারকেলগাছ আছে। এসব গাছে যত সংখ্যক নারকেল ধরে, তার অধিকাংশ ইঁদুর নষ্ট করে ফেলে। সঙ্গে আছে রোগবালাই, ফলে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না।
সাগর মোহনার ইউনিয়ন চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরির বাসিন্দা মো.
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নে কমপক্ষে তিন হাজার নারকেলগাছ ছিল। ভাঙনের কারণে এখন ৩০টিও নেই। ঢালচরের বাসিন্দা মৎস্য আড়তদার শাহে আলম ফরাজি বলেন, তাঁদের ১৭৫টি ফলন্ত গাছ ছিল। বছরে প্রায় ১৫ হাজার ডাব বিক্রি করতেন। সব মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে।
ঢালচরের মতো ভোলার ৭ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের আংশিক ও সম্পূর্ণ মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে নারকেলগাছের সংখ্যাও বাড়ছে না।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, অতিরিক্ত খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে নারকেলগাছে রোগবালাই বেড়েছে। বর্তমানে বিদেশি জাতের নারকেলগাছে ১০ বছর বয়সের পরে নারকেল কম ধরে। সাবেক জাতগুলোতে ৩৫ বছর পর্যন্ত নারকেল দেয়। তবে যত্ন করলে আজীবন ফলন হয়। এ জন্য বছরে দুইবার, নির্ধারিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। এক. বর্ষার আগে জৈ৵ষ্ঠ মাসে, দুই. বর্ষার পরে শীতের আগে। অন্যদিকে পোকামাকড়ের জন্য পাওয়ার ফুড পাম্প দিয়ে সোডা-সাবানের গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে নারকেলগাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে। পরে ইমিডা ক্লোরফিড ও ভার্টিমেক্স স্প্রে করতে হবে।
দাম পান না গাছের মালিকেরা
ভোলার সদর রোডে বর্তমানে একটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়। ঝুনা নারকেল ভোলায় বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়। ক্রেতাদের চড়া দামে ডাব ও নারকেল কিনে খেতে হলেও গাছের মালিকেরা অনেক কম দাম পান।
সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মিজিবাজার এলাকার পল্লিচিকিৎসক আমির হোসেন বলেন, এবার তিনি তাঁর দুটি গাছের ৩৭টি ডাব ৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
ভোলায় সরাসরি মালিকের বাড়ি থেকে ডাব ও নারকেল সংগ্রহের জন্য একধরনের পেশাজীবী রয়েছেন। তাঁদের স্থানীয়ভাবে ‘হকার’ বলা হয়। একজন হকার এক দিনে ৪০টি পর্যন্ত গাছে উঠে ডাব কাটতে পারেন। লালমোহন উপজেলার হকার মো. জাফর ও সিরাজুল ইসলাম জানান, তাঁরা এ বছর ৫০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা দরে ডাব কিনছেন। তবে দাম আরও বাড়বে। গরম বাড়লে দাম বেশি পাওয়া যায়। গত বছর একটি ডাব ৮০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। তাঁরা একটি ডাবে ১০-১৫ টাকার বেশি লাভ করতে পারেন না। তবে যাঁরা খুচরা কেটে বিক্রি করেন, তাঁরা বেশি লাভ করেন। একটি ডাবে কখনো ৫০ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে খুচরা বিক্রেতাদের।
শতাধিক আড়তে বিশাল কর্মযজ্ঞ
জেলার নানা প্রান্ত থেকে ডাব সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর জন্য ভোলায় শতাধিক ডাবের আড়ত গড়ে উঠেছে। ডাবের আড়তদার, হকার, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি আড়তের অধীন ১৫-২০ জন হকার আছেন। তাঁরা ডাব কিনে বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও মূল ভূখন্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ ডাব-নারকেল সংগ্রহ করে বাইরে পাঠানো হয়। তবে শীত পড়লে ডাবের চাহিদা অনেক কমে যায়।
একসময় ভোলা থেকে লঞ্চে করে ডাব নেওয়া হতো ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। এখন সরাসরি ট্রাকে ঢাকাসহ অন্যত্র নেওয়া হয়। এখনো অনেকে লঞ্চে উঠিয়ে নেন।
লালমোহন বাজারের ডাবের আড়তদার রাসেল বকশি বলেন, তাঁরা ভোলা থেকে নিয়ে ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ডাব বিক্রি করেন। মোকামে তাঁরা একটি ডাব ৮০-৮৫ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারেন না। একটি ডাবে তাদের ২-৩ টাকার বেশি লাভ থাকে না। এখন ডাবের চাহিদা বেশি। লালমোহন থেকে প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার ডাব ভোলার বাইরে পাঠাচ্ছেন।
ভোলার কমপক্ষে ৫০টি নারকেলগাছের মালিক বলেন, ভোলায় নারকেলগাছের যত্ন নেওয়ার জন্য সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। কৃষকও জানেন না কীভাবে নারকেলগাছের যত্ন নিতে হয়।
তবে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললে ভুল হবে, আছে অপ্রতুল।
ভোলার বিসিক শিল্পনগীরর মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. জামাল উদ্দীন খান বলেন, ভোলায় প্রচুর নারকেল উৎপাদিত হলেও কখনোই নারকেলকেন্দ্রিক কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। একসময় ভোলায় উৎপাদিত ঝুনা নারকেল ট্রলার-লঞ্চ ভরে ভোলার বাইরে—ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে যেত। সেখানের কারখানায় তেল হয়ে আবার টিন ভরে ভোলায় আসত। এখন লোকজন ডাব বিক্রি করেন, ট্রাক ভরে ডাব ও ঝুনা নারকেল ভোলার বাইরে যাচ্ছে। যদি সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করে, তবে ভোলায় গড়ে উঠতে পারে নারকেলকেন্দ্রিক কারখানা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ছ র যত ন ন ন উপজ ল র র ন রক ল ক ন রক ল ন রক ল র ল ইসল ম আড়তদ র শত ধ ক ন বল ন র জন য আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ
রাজধানীর গাবতলী–মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে বিজিবি মার্কেটে গড়ে ওঠা দ্বীপনগর মাছের আড়ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ জমজমাট থাকে। এই তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এসব নানা জাতের দেশি-বিদেশি মাছ।
এ আড়তে গরিবের মাছখ্যাত পাঙাশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়। নদীর পাশাপাশি সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। ওমান, চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মাছ সরাসরি এখানে আসে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রথমে বিজিবি মার্কেটে মাছ বিক্রি শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালে এ বাজারে দ্বীপনগর আড়তের যাত্রা শুরু হলেও বাজার জমে ওঠে ২০১৫ সালের পর থেকে। পরে পাঁচটি হিমাগার ও একটি বরফকল নিয়ে এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য আড়তে পরিণত হয়, যেখানে ছোট–বড় প্রায় ৪০০ পাইকারি দোকান রয়েছে।
আড়তদার ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দ্বীপনগর আড়তে জ্যান্ত মাছের পাইকারদের বিনা মূল্যে পানি সরবরাহ করায় তাঁদের প্রত্যেকের প্রায় ৫০০ টাকা করে সাশ্রয় হয়। তার ওপর যাতায়াতের সুবিধা ভালো, ওজনে কেউ মাছ কম দেয় না, চুরিও হয় না এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশে বেচাকেনা করা যায়। এসব কারণে এটি এরই মধ্যে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় আড়তে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে দিন দিন পাইকার বাড়ছে এবং মোকামও আশপাশে বিস্তৃত হচ্ছে।
দ্বীপনগর আড়তের ‘অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মো. ইনসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার কেজি পাঙাশ বিক্রি হয়, যা কারওয়ান বাজারেও হয় না। সব ধরনের মাছ মিলিয়ে দৈনিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।’
* দ্বীপনগর আড়তে পাঙাশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়।* নদী ও সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছও বিক্রি হয়।
* প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে ওমান, সুদান, জর্ডান, চীন ও জাপান থেকে আমদানি করা মাছ এখানে বিক্রি হয়।
আড়তদার ও পাইকারদের দাবি, এটি দেশে পাঙাশ মাছের সবচেয়ে বড় আড়ত। এখানে দিনে ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পাঙাশ মাছ আসে। এসব ট্রাকে ৩০ থেকে ৪০টি করে পাঙাশের ড্রাম থাকে। এর একেকটিতে ৪০ কেজি মাছ থাকে। গড়ে ৩৫টি ট্রাকে ৩৫টি করে ড্রাম এবং প্রতি ড্রামে ৪০ কেজি ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, এখানে দৈনিক ৪৯ হাজার কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার, উত্তরা এবং আবদুল্লাহপুর এলাকার পাইকারেরা দ্বীপনগর আড়তে মাছ কিনতে আসেন। অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মনির হোসেন বলেন, কম দামে পাওয়া যায় বলে পাইকারেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। তাঁর নিজস্ব বরফকল রয়েছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বরফের পাটা বিক্রি করেন। তাই বাইরে থেকে বরফ আনতে হয় না।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মাছ কিনতে দ্বীপনগর আড়তে চলে আসেন। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নিলামের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তাজা ও হিমায়িত মাছের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা মাছের বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। ৯টার পরপরই সব ব্যস্ততা শেষে ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়ে যায়।
সাভার নবীনগর থেকে আসা পাইকার ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এখান থেকে দৈনিক ১৫০–২০০ কেজি সাগরের মাছ নিয়ে এলাকার বাজারে বিক্রি করেন।
আড়তদারেরা জানান, দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টেকেরহাট, খুলনা, রাজশাহী, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ সব অঞ্চল থেকেই মিঠাপানি এবং নদী ও সাগরের মাছ আসে দ্বীপনগর আড়তে। ওমান, সুদান, জর্ডান, জাপান, চীন এবং ভারত থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হয়।
মেসার্স ঢাকা গাবতলী ফিশ আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক ৫ টনের মতো মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো।’ তাঁদের হিমাগারে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ মাস পর্যন্ত মাছ ঠিক থাকে। প্রয়োজনে তাপমাত্রা আরও কমানো যায় বলে জানান তিনি। তবে আড়তদারদের হিসাবে এসব হিমাগার থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।
৫৫০ টাকা করে বাইম মাছ কেনার পর আদাবর বাজারের একজন পাইকার প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই মাছ বিক্রি করবেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। পোয়া মাছ কিনেছেন ৩৩০ টাকা কেজি দরে, বেচবেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ওই পাইকার আরও জানান, আগে কারওয়ান বাজার থেকে মাছ কিনলেও এখন সুবিধা থাকায় দ্বীপনগরে আসেন। প্রতিদিন পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ থেকে ৭০ কেজি মাছ কেনেন।