গাজীপুরের শ্রীপুরে এক শ্রমিকের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত দেড় হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

শ্রীপুর থানার ওসি জানান, মঙ্গলবার রাতেই শিল্প পুলিশের এসআই সুশান্ত কুমার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩ শ্রমিককে গতকাল বুধবার গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়নপুরের জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিক জাকির হোসেন (২৪) আটতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১১ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন।

মারা যাওয়া শ্রমিক জাকির নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মুক্তার হোসেনের ছেলে। তাঁর সহকর্মীদের দাবি, জাকির কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চান। তাঁকে ছুটি না দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে জাকির আটতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, জাকির ছুটি চাননি, তাঁকে লাঞ্ছিতও করা হয়নি। পারিবারিক কলহের কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে গত সোমবার সন্ধ্যায় জাকির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর চালায়। পুলিশ সেখানে অবস্থান করছিল। শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিল্প পুলিশও হাজির হয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানার সামনে রাখা পুলিশের এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়ির ওপর উঠে শ্রমিকরা উল্লাস করতে থাকে। সাদা রঙের এ গাড়িতে তারা ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশও পাল্টা অ্যাকশনে যায়। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দফায় দফায় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) জুবায়ের এম বাশার বলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে জাকির কয়েকদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। এ হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি ছুটি চাননি। তাঁকে লাঞ্ছিত করার প্রশ্নই ওঠে না।

শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য ১৯টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের ১১ জন সদস্য আহত হন। এরই মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ