হ্রদ ও পাহাড়ে ঘেরা পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এবার ঈদুল আজহায় লম্বা ছুটি থাকায় পর্যটকের ভিড় বাড়বে বলে আশা হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিকদের। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে শহরের হোটেল-মোটেলের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুক হয়ে গেছে।

এদিকে ঈদের ছুটিতে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ছুটবেন হাজারো পর্যটক। ছুটি শুরুর আগেই শত শত ভ্রমণপিপাসু বুকিং করে রেখেছেন পর্যটকবাহী নৌযান। জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের বিলাসবহুল ৯০টি বোটসহ দেশীয় বোটগুলোও ইতোমধ্যে বুক হয়ে গেছে। বোট পরিচালনায় থাকা সবাই ব্যস্ত পর্যটক বরণে।

হাউসবোট ও দেশীয় বোট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক টাঙ্গুয়ায় আসবেন– এমন আশা থেকে বোটগুলো নতুন রং, পর্দা, বিছানার চাদরসহ নানা কাজ করে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ৯ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত প্রায় সব বোটই অগ্রিম ভাড়া হয়ে আছে। 

সুনামগঞ্জ হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ বলেন, আমাদের ৯০টি হাউসবোটের প্রায় সব বুকিং শেষ। এবার সব বোটেরই অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য লাইফ জাকেট ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা সন্তোষজনক করেই বোট ঘুরবে টাঙ্গুয়ার হাওরে। সমিতির পক্ষ থেকে থাকছে কঠোর মনিটরিং। 

তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের ছুটিতে টাঙ্গুয়ায় পর্যটকের ভিড় হবে চিন্তা করেই পুলিশকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নৌ-পুলিশ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশও কাজ করবে হাওরে। ঘাটগুলোতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল ফোন নম্বরগুলো টাঙিয়ে দেওয়া হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বললেন, টাঙ্গুয়ায় ভ্রমণ নীতিমালা মেনে সব বোট নিয়ে ঢুকতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা ছুটে যান রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পর্যটন ব্যবসায় জড়িতরা জানান, এবার টানা ১০ দিনের ছুটিতে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন হোটেল ও মোটেলগুলোতে অগ্রিম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বুকড দিয়েছেন পর্যটকরা। ইতোমধ্যে রাঙামাটি সরকারি পর্যটন মোটেলে ৮০ শতাংশ রুম বুক হয়েছে। রাঙামাটিতে পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, রাজ বনবিহার, জেলা প্রশাসনের বাংলো, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধি, পুলিশের পলওয়েল পার্ক, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক। টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য আরও বেড়েছে, তাই দেখতে ছুটবেন পর্যটকরা।

মেঘ ও পাহাড়ঘেরা সাজেকে রিসোর্ট ও কটেজের অধিকাংশ কক্ষ বুক হয়েছে। হোটেল মতিমহলের ব্যবস্থাপক চন্দন দাশ জানান, এবার ঈদের ছুটিতে তাঁর হোটেলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ অগ্রিম কক্ষ বুক হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্য বাকি কক্ষও বুক হয়ে যাবে। সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মণ জানান, সাজেকের কটেজ ও রিসোর্ট টানা ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, ঝুলন্ত সেতুসহ পর্যটন স্থানগুলো নতুন করে সাজানো হয়েছে। পর্যটকদের জন্য পর্যটন মোটেলে নতুন সংযোজন হয়েছে সানরাইস ইকো পার্ক। এ পার্কে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

(তথ্য দিয়েছেন রাঙামাটি অফিস এবং সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র ছ ট ত প রস ত ত ব যবস থ ব ক হয়

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু