শুধু বাবা বললেও মেনে নেওয়া যেত। বারান্দার দরজা আটকে গেছে? তাক থেকে ভারী কিছু নামাতে হবে? আমার ডাক পড়বে। এমনকি বুয়াও মাঝেমধ্যে এসে বলে, ‘সোফাটা একটু টাইনা ধরো তো, নিচে ঝাড়ু দিমু।’

জিমে ওয়েট লিফটিং করি বলে পৃথিবীর যাবতীয় ভার আমার ওপর এসে পড়বে? এটা কেমন কথা? এসবও মেনেই নিয়েছিলাম। কিন্তু তুবা এবার যা বলল, কিছুতেই মানতে পারলাম না। শেষ মেট্রোতে বাসায় যাচ্ছি। বেশ কয়েকজনের ভুঁড়ির চাপে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যেই মেসেঞ্জারে তুবার মেসেজ। এনগেজমেন্ট হয়েছে কদিন আগে। এখন নানা পরিকল্পনায় যুক্ত থাকতে হয় আমাকে। দেরিতে রিপ্লাই দেওয়ার সুযোগ নেই। ‘তুমি কই?’

‘মেট্রোতে।’

‘তোমাকে হাটে যেতে হবে। দুলাভাই তোমাকে দেখতে চায়।’

‘আমি কি গরু? নাকি মরুর উট?’

‘আশ্চর্য, তুমি গরু কিনতে পারো কি না, সেটা দেখতে চায়। আব্বা দেশের বাইরে। গরু কিনতে কে যাবে?’

‘দুলাভাই।’

‘সে তো যাবেই, আপুর পক্ষ থেকে। আমার পক্ষ থেকে তুমি যাবা। আর কদিন পর থেকে তো এসব তোমাকেই করতে হবে।’

‘আমার পক্ষে হাটে যাওয়া সম্ভব না। আমি গরু ভয় পাই। ছোটবেলায় গরুর রচনা লিখতে দিয়েছিল স্কুলে, লিখতে পারি নাই। সবার সামনে স্যার অপমান করেছিলেন। তখন থেকেই গরু ভয় পাই।’

‘অ্যাই, তুমি না জিম করো? তুমি গরু ভয় পাবা কেন? দুলাভাই একা যাবে?’

‘দরকার হলে উনি ছোটখাটো মব নিয়ে যাক। আমি কেন?’

‘ওদের বলেছি, তুমি যাবে। এখন না গেলে ওরা কী ভাববে?’

‘তুমি তোমার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করো। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। অবস্থান পরিবর্তন এখন একটা ট্রেন্ডি ব্যাপার।’

‘তুমি তাহলে যাবে না?’

‘না।’

দুলাভাই মেইলে বিস্তারিত লিখে পাঠালেন। সঙ্গে পাঠালেন চেকলিস্ট—হাটে যাওয়ার জন্য কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কেমন পোশাক পরতে হবে—বিস্তারিত লেখা। মনে হলো, গরু কিনতে নয়, বিয়ে করতে যাচ্ছি।

এরপর মেসেঞ্জারে তিনটা ডট কিছুক্ষণ ওঠানামা করল। ঝড়ের পূর্বাভাস। কিন্তু কোনো মেসেজ এল না।

‘রাজি হইয়া যান ভাই। নাইলে ঝামেলায় পড়বেন।’ কথাটা শুনেই ঘুরে তাকালাম। একেবারে ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলছে এক লোক। তার চেয়েও বড় কথা, লোকটা এতক্ষণ আমার পুরো কনভারসেশন পড়েছে! কী ভয়ংকর! অবশ্য কথা ঠিকই বলেছে। রাজি হয়ে যাওয়াই ভালো। গরু ভয় পাই, এটা সত্য। কিন্তু তুবার রাগ ভয় পাই আরও বেশি। চারটা স্টেশন পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন কোনো মেসেজ এল না, তখন নিজেই লিখলাম, ‘কখন যেতে হবে?’

‘কাল সকালে।’ রিপ্লাই এল সঙ্গে সঙ্গে। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলতে থাকা লোকটাকে কড়া গলায় বললাম, ‘সরেন না ভাই। আপনি তো কোলে উঠে যাচ্ছেন!’

কিছুক্ষণের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে একটা লিংক চলে এল। গুগল ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট লিংক পাঠিয়েছেন দুলাভাই। বিষয়: পবিত্র ঈদুল আজহার গবাদিপশু ক্রয় অভিযান। গেস্টের লিস্টে তাঁর আর আমার নাম। সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মনে হলো, আমি এ কিসের মধ্যে এসে পড়লাম?

তুবা এবার কল দিল, ‘আবীর, দুলাভাই বলল, তুমি এখনো ইভেন্টে রেসপন্স করছ না।’

‘বললাম তো, আমি যাব।’

‘ওকে, কিন্তু ফরমালি গোয়িং দাও। দুলাভাই করপোরেট মানুষ, এসব বিষয়ে খুব গোছানো।’

দিলাম গোয়িং। দুলাভাই মেইলে বিস্তারিত লিখে পাঠালেন। সঙ্গে পাঠালেন চেকলিস্ট—হাটে যাওয়ার জন্য কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কেমন পোশাক পরতে হবে—বিস্তারিত লেখা। মনে হলো, গরু কিনতে নয়, বিয়ে করতে যাচ্ছি।

আরও পড়ুনসহজে গরুর মাংসের কারি বানাবেন যেভাবে১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সকাল ১০টায় হাটে যাওয়ার কথা। দুলাভাই সাতটা থেকে আমাকে ফোন করতে শুরু করলেন। নাশতা খেতে গিয়েই বাবার মুখোমুখি হলাম। বাবা বলল, ‘কিরে, এত সকালে কোথায় যাচ্ছিস?’

‘যাই, একটু ঘুরে আসি।’ বলে দ্রুত বেরিয়ে গেলাম। কতবার আমাকে হাটে যেতে বলেছে বাবা, যাইনি। এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে ঠিকই যাচ্ছি।

হাটে এসে দেখি, ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন দুলাভাই। গায়ে জার্সি, ট্রাউজার, পায়ে গামবুট, মাথায় হ্যাট। হাতে একটা লাঠিও আছে দেখছি। প্যাচপেচে কাদা মাড়িয়ে রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে গরু দেখা শুরু করলাম। চারপাশ থেকে এলোপাতাড়ি গরু আসছে। কোনোটা উত্তেজিত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ গরুর লাথি খাচ্ছে। ভয়ানক অবস্থা। দুই সারি লম্বা শিংয়ের গরুর মাঝখানের সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, এখনই গুঁতা খেয়ে পেট ফুটা হয়ে যাবে। এর মধ্যে পিছলে পড়তে গিয়েও সামলে নিলাম কয়েকবার। হঠাৎ বেশ বড় একটা গরুর পিঠ চাপড়ে দুলাভাই বললেন, ‘কেমন? কী মাসল, দেখেছ! মনে হয় জিম করে।’

ইঙ্গিত স্পষ্ট। কিন্তু জবাব দিলাম না। সব বলে ব্যাট চালানোর দরকার নাই। মাঝেমধ্যে কিছু বল ছেড়ে দিতে হয়।

কিন্তু আমাকে ছাড়ল না ইউটিউবাররা। গরুর দাম বেশি কি না, কেমন গরু পছন্দ, পছন্দমতো গরু পাচ্ছি কি না—এসব প্রশ্ন আমাকে ঘিরে ধরল, হাটের গরুগুলোর মতোই। কথা বলব না বলেও কয়েকজনের সঙ্গে কী কী যেন বললাম। ওদিকে দুলাভাই তাড়া দিচ্ছেন। তুবা ভিডিও কলে গরু পছন্দ করছে মনে হলো। এই অন্তর্বর্তীকালীন ঝামেলা থেকে আমি কীভাবে বের হব?

এসেছি সকালে। এখন সন্ধ্যা। বারবার একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছি। দুলাভাই বললেন, ‘কী ব্যাপার, তুমি দেখি কাহিল হয়ে গেলে! বি এনার্জেটিক, ম্যান। তুমি না জিম করো?’

এবারও কিছু বললাম না। কলা আর বানরুটি ছাড়া সারা দিন কিছু খাওয়া হয়নি। দুলাভাই অবশ্য শিঙাড়া, পুরিসহ নানা জিনিস খাচ্ছেন। কিন্তু আমি জিম করি বলে ভাজাপোড়া খাই না।

হ্যাঁচকা টান সামলাতে না পেরে আমার হাত থেকে ছুটে গেল দড়ি, গরু এবং দুলাভাই। উনি এখনো গরুর লাগাম টেনে সামলানোর চেষ্টা করছেন। আমি ছুটছি। সামনে ছুটছে গরু আর দুলাভাই। লোকজন চিৎকার করছে, ‘ওই গরু ছুটসে! গরু ছুটসে!’

অবশেষে দুলাভাই একটা গরু পছন্দ করলেন। ভিডিও কলে বাড়ির বাকি সদস্যরা অনুমোদন দিলেন সেই গরুটিকে। হাঁপ ছাড়লাম। যাক, এবার মুক্তি। গরু ট্রাকে উঠে যাবে, আমি চলে যাব বাসায়। কিন্তু দুলাভাই বললেন ভিন্ন কথা।

‘ট্রাক? আরে, কী বলো! এখান থেকে এখানে আবার ট্রাক লাগে নাকি? ব্যাটারা অযথা তিন–চার হাজার টাকা নেবে। হাঁটিয়ে নিয়ে যাব।’

‘কী বলেন, ভাই?’

‘ইয়েস। একটা ফান আছে। এটাই ট্র্যাডিশন। সবাই জিজ্ঞেস করবে কত কত, আমরা দাম বলব। মজা না?’

‘এত বড় গরু কীভাবে নেব?’

‘আরে, তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? তোমার যা বাইসেপ, এক পাশ ধরবে। তাহলেই হবে।’

‘অন্য পাশে?’

‘যার গরু, সে থাকবে।’

‘আমি পারুম না, স্যার!’ বিক্রেতা পাশ থেকে বললেন, ‘আমার একটা লাইভ আছে। টাইম নাই। গরু আপনাগো বুঝায় দিলাম। কেমনে নিবেন জানি না।’

আমার হাতে দড়ি ধরিয়ে লোকটা গরুর ভিড়ে হারিয়ে গেল। ভয়ে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। দুলাভাই বাঁ হাতে লাঠি ধরে ডান হাতে গরুর লাগাম ধরে বললেন, ‘লেটস গো।’

দুলাভাইয়ের ইংরেজি শুনেই বোধ হয় আচমকা লাফিয়ে উঠল গরু। আমিও ছুটলাম গরুর দড়ি ধরে। কিছুদূর দৌড়ে গরু থমকে দাঁড়াল। কোনোভাবেই আর এগোয় না। দুলাভাই অনেক চেষ্টা করলেন, সবই ব্যর্থ। আশপাশ থেকে নানাজন নানা পরামর্শ দিল। রিকশা থেকে একজন বলল, ‘ধাক্কা দেন। আগাইব।’

‘এত বড় গরুকে ধাক্কা দেব কীভাবে?’

‘আপনার যে বডি, এরম বডি থাকলে আমি টাইনা লইয়া যাইতাম একাই।’

‘কথায় লজিক আছে,’ দুলাভাই সামনে এগোলেন। ‘আবীর, ধাক্কা দাও।’

কী আর করা, ধাক্কা দিলাম। গরু কী বুঝল জানি না, আচমকা দৌড় শুরু করল। হ্যাঁচকা টান সামলাতে না পেরে আমার হাত থেকে ছুটে গেল দড়ি, গরু এবং দুলাভাই। উনি এখনো গরুর লাগাম টেনে সামলানোর চেষ্টা করছেন। আমি ছুটছি। সামনে ছুটছে গরু আর দুলাভাই। লোকজন চিৎকার করছে, ‘ওই গরু ছুটসে! গরু ছুটসে!’

আরও পড়ুনদুধ দিয়ে গরুর মাংস রান্না করেছেন কখনো? দেখুন রেসিপি০৩ এপ্রিল ২০২৫

কিছুদূর দৌড়ে আমি থামলাম। ট্রেডমিলে ১০ মিনিটের বেশি দৌড়াই না, রাস্তায় দম ফুরিয়ে গেল ৫ মিনিটেই। ততক্ষণে গরু আর দুলাভাই দৃষ্টিসীমার বাইরে। কয়েক মিনিট পর আবার ছুটলাম। গলির মাথায় এসে দেখি, দুলাভাই রাস্তায় পড়ে আছেন। গরু নেই। দুলাভাই দাঁতে দাঁতে চেপে বললেন, ‘তুমি কোথায় ছিলে?’

‘সেটা এখন আলোচনার বিষয় না, ভাই। গরু কই?’

‘সামনে।’

আবার ছুটলাম। কিছুদূর গিয়ে দেখি চারপাশে জটলা। গরুটাকে ধরে রেখেছে কয়েকজন। একজন বলল, ‘আপনার গরু?’

‘হ্যাঁ।’

‘নায়ক ভাই। পুরা নায়ক।’ আমি হাঁপাতে হাঁপাতে নিজের দিকে তাকালাম। সারা গায়ে কাদা, আমাকে কোন দিক দিয়ে নায়ক মনে হচ্ছে ওদের?

‘বুঝলাম না, ভাই।’

‘গরুডা পুরা নায়ক, ভাই। আইসা ডাইরেক্ট গুঁতা মারল। ছিনতাইকারী ডাউন।’

‘ছিনতাইকারী?’

‘ওই যে দেখেন।’

ভিড় ঠেলে দেখি, একজন রাস্তায় পড়ে আছে। একটু দূরে পড়ে আছে একটা চাপাতি।

ফেসবুকে আমার ভিডিও চলে গেছে, গরুর পেছনে ছুটছি। মা-বাবা তো দেখেছেই, বাসার দারোয়ানও দেখে ফেলেছে। মা বলেছে, ‘তুই একটা ভালো জামা পরে যেতে পারলি না? কী পরেছিস এটা?’

লোকজনের কথা শুনে বুঝলাম, গলির মাথায় একজনকে ছিনতাইকারী ধরেছিল, ঠিক সে সময়ই পেছন থেকে গরুটা গিয়ে গুঁতা দিয়েছে ছিনতাইকারীকে। এরপর গরু বসে পড়েছে। শুয়ে পড়েছে ছিনতাইকারী।

‘দেখলে, কী গরু কিনলাম, আস্ত একটা ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলল!’ বললেন দুলাভাই। তাঁর অবস্থা শোচনীয়। বসলে উঠতে পারেন না, উঠলে বসতে পারেন না। হাত–পা–থুতনি ছিলে গেছে। এক্স–রে করার সিরিয়াল দিয়ে বসে আছি।

‘তিন হাজার টাকা বাঁচাতে গিয়ে এখন কত টাকার চাপে পড়লেন, ভাই?’

‘টাকার কথা ভুলে যাও,’ ব্যথায় চোখ কুঁচকে বললেন। ‘কী এক্সাইটিং একটা ব্যাপার হলো, সেটা ভাবো!’

আর ভাবা, ফেসবুকে আমার ভিডিও চলে গেছে, গরুর পেছনে ছুটছি। মা-বাবা তো দেখেছেই, বাসার দারোয়ানও দেখে ফেলেছে। মা বলেছে, ‘তুই একটা ভালো জামা পরে যেতে পারলি না? কী পরেছিস এটা?’

দুলাভাই পাশে বসে তখনো গরু গরু করছেন। বিরক্ত লাগছে। ‘ছিনতাইকারীকে ফেলে দিল! কী ম্যাজিক্যাল গরু!’

‘কত?’ নার্স এসে জিজ্ঞেস করল।

‘১ লাখ ৮০,’ দুলাভাই বললেন।

‘আপনার সিরিয়াল কত? এক্স–রে করাবেন না?’

‘ও হ্যাঁ, ৩।’

‘আসেন। এই, ওয়ার্ড বয় কই? হুইলচেয়ারটা নিয়ে আসো।’

দুলাভাই হুইলচেয়ারে এগোলেন। আমি আর বসে বসে কী করব? আপনাদের একটা সিম্পল পরামর্শ দিই। সব সময় টাকা বাঁচানোর চিন্তা করবেন না। করলে দুলাভাইয়ের মতো বিপদে পড়তে হতে পারে। ঈদ মোবারক।

আরও পড়ুনগরুর মাংসের নিম কোরমা রাঁধবেন যেভাবে, দেখুন রেসিপি১৮ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ল ভ ই বলল ন ভয় প ই জ ম কর পছন দ কজন র করছ ন বলল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদ সামনে রেখে মিষ্টির চেয়ে দইয়ের বিক্রি বেশি

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এবার বাজারে মৌসুমি ফল আম, জাম ও লিচুর আধিক্য থাকায় মিষ্টির বিক্রি কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, মিষ্টির চাহিদা কম থাকলেও দইয়ের বিক্রি বেড়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানির ঈদে মিষ্টির চেয়ে দইয়ের চাহিদা বেশি থাকে। এ বিষয়ে আমলের সহকারী এরিয়া ম্যানেজার রেজাউল হাসান বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমাদের প্রতিষ্ঠানে মিষ্টির চেয়ে দই বেশি বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ সময়ে আমাদের প্রতিটি শাখায় ২০ থেকে ২৫ হাঁড়ি (১ কেজি) দই বিক্রি হয়। ঈদকে সামনে রেখে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাঁড়ি দই। তবে সব মিলিয়ে এবারের মিষ্টি বিক্রি আগের বারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।’

মিষ্টির দোকানিরা বলছেন, ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুকে ঘিরে সবার ব্যস্ততা থাকে। এ কারণে ঈদে অতিথিও কম থাকে। মিষ্টি প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের কলাবাগান শাখার ব্যবস্থাপক অনিক ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঈদ মৌসুমে যে রকম মিষ্টি উৎপাদন করে থাকি, এবারও সে রকম প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে সেই তুলনায় বিক্রি অনেক কম। কয়েক মাস ধরে মিষ্টির বিক্রি কমেছে। সব মিলিয়ে মিষ্টি বিক্রি অতীতের যেকোনো ঈদের সময়ের তুলনায় অর্ধেক।’

মিষ্টি তৈরি ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম সুইটসের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক খলীলুর রহমান ১৯ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ বছর বিগত যেকোনো বছরের তুলনায় বিক্রি কম। আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতা উচ্চবিত্ত শ্রেণির। সরকারি লম্বা ছুটির সুযোগে তাঁদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে ঈদের ছুটি কাটাতে গেছেন। তাই প্রত্যাশার মাত্র ১০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে।’

এ ছাড়া এবার বাজারে গ্রীষ্মের মৌসুমি ফলের সরবরাহও প্রচুর। বাজারে আম, জাম, লিচুসহ সব ধরনের ফলের সরবরাহ বেশি থাকায় দামও তুলনামূলক অন্যান্য বারের চেয়ে কম। এ সময়ে তাই অনেকে মিষ্টির বদলে অতিথি আপ্যায়নে মৌসুমি ফল বেছে নিয়েছেন। এটিও মিষ্টির চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর শ্যামলীর বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তানিয়া রহমান। ঈদের আগের দিন বাবার বাসায় বেড়াতে যাবেন বলে মিষ্টি কিনতে যান বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এক কেজি মিষ্টির পাশাপাশি কিনলেন দুই হাঁড়ি (১ কেজি) টক দই। তিনি জানান, বাসায় মা–বাবা দুজনেরই ডায়াবেটিস। তাই আগে হয়তো মিষ্টি বেশি খাওয়া হতো। তবে এখন টক–মিষ্টি দইকে বেশি প্রাধান্য দেন।

বাংলাদেশ সুইট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমানে ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের অসুস্থতার কারণে মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। তাই মিষ্টি বিক্রি গত কয়েক বছর থেকেই ধীরে ধীরে কমছে। এ ছাড়া বিগত কয়েক বছরের তুলনায় মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও কিছুটা কমেছে। এবার মৌসুমি ফলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এক কেজি ভালো মিষ্টি কিনতে গেলে ৬০০ টাকা খরচ হয়। সেই তুলনায় দেশীয় ফলের দাম কম। তাই মিষ্টির বদলে অনেকে ফল কিনছেন। তবে ঈদের দিনে বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশা করছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ