আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে ১৪০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে এক হাজারের বেশি নাম উঠে এসেছে। তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপি, সরকারি আমলা এবং দলীয় নেতাকর্মী। 
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুম হওয়া ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে সরাসরি হাজির হয়ে এসব অভিযোগ জমা দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) আবদুল্লাহিল আমান আযমী, মাইকেল চাকমা প্রমুখ। এসব অভিযোগের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই ও তদন্তের কাজ চলছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের বাইরেও বিভিন্ন আদালত ও থানায় গুমের একাধিক অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগীরা। 
এদিকে, গুম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক কমিটির দুই সদস্য গত রোববার ঢাকায় আসেন। তারা হলেন– জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক কমিটির ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টিরি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারম্যান গ্রাজিনা বারনোস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ। তারা গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খুন, হত্যাচেষ্টা, গুম, নির্যাতন, অপহরণসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ৩৫৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ১৪০টিই গুমের অভিযোগ। এর অধিকাংশই ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দেবেন। 

তদন্ত সংস্থার প্রধান আনসার উদ্দিন খান পাঠান সমকালকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক গুমের অভিযোগ এসেছে। আয়নাঘর যেহেতু গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই এগুলো এক কাঠামোতে এনে ভালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মাইকেল চাকমার করা গুমের অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে আলাদাভাবে। আগামী ৩০ জুলাইর মধ্যে এসব অভিযোগের তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারব বলে আশা করছি।’ 
এদিকে, ১০ বছর আগে গুমের ঘটনায় গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরে সেটি তাৎক্ষণিক তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 
ওই দিন ট্রাইব্যুনালে এসে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে নিপীড়নের মাধ্যমে ৭ হাজার ১৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে অথবা তাদের হত্যা করা হয়েছে, জোর করে গুম করা হয়েছে ৭০৯ জনকে। 

গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ দলের সহযোগী সংগঠনের ২ হাজার ২৭৬ নেতাকর্মীকে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে বিএনপি। এর মধ্যে ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ এনেছিল দলটি। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল চাকমা। 

গুমের মামলায় হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা 
গুমের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত ২৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন– শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান প্রমুখ। 

গুম মামলার শুনানি ২৪ জুন
গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ২৪ জুন দিন ধার্য রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে এই মামলার অন্যতম আসামি র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান কারাগারে আছেন।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সম্প্রতি দাখিল করা প্রতিবেদনে গত সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ ল গ সরক র র হ স ন সহ র ঘটন য় ১৫ বছর ব এনপ তদন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি

গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

আরো পড়ুন:

‎নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত

গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের 

এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ। 

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।” 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, ‍“কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ