ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে ১৪০ গুমের অভিযোগ
Published: 16th, June 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে ১৪০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে এক হাজারের বেশি নাম উঠে এসেছে। তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপি, সরকারি আমলা এবং দলীয় নেতাকর্মী।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুম হওয়া ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে সরাসরি হাজির হয়ে এসব অভিযোগ জমা দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
এদিকে, গুম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক কমিটির দুই সদস্য গত রোববার ঢাকায় আসেন। তারা হলেন– জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক কমিটির ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টিরি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারম্যান গ্রাজিনা বারনোস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ। তারা গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খুন, হত্যাচেষ্টা, গুম, নির্যাতন, অপহরণসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ৩৫৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ১৪০টিই গুমের অভিযোগ। এর অধিকাংশই ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দেবেন।
তদন্ত সংস্থার প্রধান আনসার উদ্দিন খান পাঠান সমকালকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক গুমের অভিযোগ এসেছে। আয়নাঘর যেহেতু গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই এগুলো এক কাঠামোতে এনে ভালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মাইকেল চাকমার করা গুমের অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে আলাদাভাবে। আগামী ৩০ জুলাইর মধ্যে এসব অভিযোগের তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারব বলে আশা করছি।’
এদিকে, ১০ বছর আগে গুমের ঘটনায় গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরে সেটি তাৎক্ষণিক তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওই দিন ট্রাইব্যুনালে এসে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে নিপীড়নের মাধ্যমে ৭ হাজার ১৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে অথবা তাদের হত্যা করা হয়েছে, জোর করে গুম করা হয়েছে ৭০৯ জনকে।
গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ দলের সহযোগী সংগঠনের ২ হাজার ২৭৬ নেতাকর্মীকে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে বিএনপি। এর মধ্যে ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ এনেছিল দলটি। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল চাকমা।
গুমের মামলায় হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
গুমের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত ২৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন– শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান প্রমুখ।
গুম মামলার শুনানি ২৪ জুন
গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ২৪ জুন দিন ধার্য রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে এই মামলার অন্যতম আসামি র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান কারাগারে আছেন।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সম্প্রতি দাখিল করা প্রতিবেদনে গত সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ ল গ সরক র র হ স ন সহ র ঘটন য় ১৫ বছর ব এনপ তদন ত আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।
‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।
এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।