রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ওপর রোগীর চাপ কমাতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা চালু করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া ধাপে ধাপে যথাক্রমে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে এসব প্রস্তাব উঠে এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৫ মে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। এতে বলা হয়, জেলা সদর হাসপাতালে যেসব অবকাঠামো রয়েছে, সেই অবকাঠামো দিয়েই জটিল রোগীর বিশেষায়িত সেবা দেওয়া সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং নতুন যন্ত্রপাতি লাগবে। এর ব্যবস্থা করতে হবে। এসব হাসপাতালে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহায়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগগুলো পরিচালিত হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নেতৃত্বে। ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক, রক্ত সঞ্চালন ও অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক গঠন করতে হবে। রোগীর চিকিৎসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) সেবা উন্নত করা এবং প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিকমানের একটি আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড.

আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগে। এসব রোগের চিকিৎসাসেবা এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমাতে ও চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করতে জেলা পর্যায়ে উচ্চতর (টারশিয়ারি) স্তরের সেবা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিশেষত অসংক্রামক রোগের জটিল চিকিৎসা জেলা পর্যায়ে মিলবে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হার্টের সমস্যা, থ্যালাসেমিয়াসহ এসব রোগের চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে করতে হয়। এ জন্য ৬৪ জেলার সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার নানা অবকাঠামো রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রেসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ব্যবস্থাই রয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৩৫ ভাগ যন্ত্রপাতিই বিকল। এ ছাড়া পর্যাপ্ত জনবলও নেই মাঠ পর্যায়ে। ফলে জেলা পর্যায়ে সেবা না পেয়ে রোগীরা ঢাকামুখী হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এসব হাসপাতাল সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। প্রতি রোগীর জন্য গড়ে ১০ মিনিটের পরামর্শ সময় নিশ্চিত করতে হবে। অতিদরিদ্র বা যারা দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, তারা সব হাসপাতালে বিনামূল্যে সব সেবা পাবেন। 

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, রোগীর জন্য ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ জন্য অনেক অর্থের দরকার হবে। এই অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থের জন্য বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে কমিশন। 
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর কিছু বেশ কিছু কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাতে সেবা বিকেন্দ্রীকরণে উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে দুটি জিনিস বেশি প্রয়োজন হবে– একটি অর্থ, অন্যটি দক্ষ জনবল। দুটিই উন্নত করতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বাজেট বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাত গুরুত্ব পায়নি। আবার ২৫-৩০ বছর দেখা গেছে, স্বাস্থ্যের ৬০, ৭০ বা ৭৫ ভাগের বেশি বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহার হয় না। বিভিন্ন স্তরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের অর্থ ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর প রস ত ব ব যবস থ পর য য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ