কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় ‘মব ভায়োলেন্স’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) কমে আসার কথা জানিয়েছে সেনা সদর। জানমালের ক্ষতিসাধন, ‘মব ভায়োলেন্স’ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভবিষ্যতেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে সেনা সদর।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ-তে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো.

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মব ভায়োলেন্স, জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যেকোনো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং করবে এবং আমরা আগের তুলনায় মব ভায়োলেন্স অনেকাংশে কমিয়ে নিয়ে এসেছি।’

ব্রিফিংয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনো সরকারের পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি কোনো নির্দেশনা প্রাপ্ত হইনি। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করব।’

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অনেক মানুষকে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করা হচ্ছে; এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সেনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড সতর্ক আছে। সীমান্ত এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সেনাবাহিনী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। বিজিবি ও কোস্টগার্ড বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে আরাকান আর্মির উত্থানে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে শুরু করেছে, এ বিষয়ে সেনা সদরের কোনো বক্তব্য আছে কি না—এমন প্রশ্নে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে এই মুহূর্তে বিস্তারিত তথ্য নেই।’

ব্রিফিংয়ের বলা হয়, গত তিন সপ্তাহে ৫৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ৯৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। আর গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৬৭টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া ১৫ হাজার ২৬২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী রয়েছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনসহ একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কোনো তালিকা করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী বা যেকোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মাদকের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান চলমান আছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত তিন সপ্তাহে ৪৫২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৪৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ঈদুল আজহার আগে ও পরে দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী। গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি এবং বাড়তি মূল্যে টিকিট বিক্রয় রোধে সচেষ্ট ছিল সেনাবাহিনী। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পেয়ে ১ হাজার ২৫৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় এবং ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩ টাকা উদ্ধার করে যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মব ভ য় ল ন স গ র প ত র কর কর ন ল র কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বিটিভি-বেতারের স্বায়ত্তশাসনে পাঁচ উপদেষ্টার সমন্বয়ে কমিটি গঠন

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের নেতৃত্বে পাঁচ উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।

এ কমিটি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথরেখা তৈরিতে কাজ করবে। পাশাপাশি টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের গত ১৫ বছরের নীতিমালা পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতের নীতি প্রণয়নে কাজ করবে।

শিক্ষা উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

গত মার্চে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। এ কমিশনের প্রধান ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ।

প্রতিবেদনে বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। এ প্রতিষ্ঠানের নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা’। এ প্রতিষ্ঠানের বার্তা বিভাগ হিসেবে বাসসকে একীভূত করতে বলেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানে তিনটি বিভাগ থাকবে। এগুলো হলো টেলিভিশন, বেতার ও বার্তা বিভাগ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ