প্রায় প্রতিদিন ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়: নেতানিয়াহু
Published: 19th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি এটাকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলের দক্ষিণে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি জানান, ‘প্রায় প্রতিদিন’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। খবর-বিবিসি
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি তার দৃঢ় সংকল্প, দৃঢ়চিত্ত ও স্পষ্টতা- যখন তিনি বলেন যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না এবং ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। তিনি তাদের আলোচনার মাধ্যমে এটি (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা) করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তারা তার সঙ্গে ছলনা করলো, আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এটা করতে পারেন না।’
সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই অনেক সাহায্য করছে।’
সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের দিক থেকে পারমাণবিক হুমকি ‘অপসারণ’ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ‘এই অভিযানের শেষে ইসরায়েলের জন্য কোনো পারমাণবিক হুমকি থাকবে না, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকিও থাকবে না। সোরোকা হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ইতোমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘খুব জোরালোভাবে’ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু ছিলেন কিনা জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউই নিরাপদ নয়’।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আল–কাহহার’: অপরাজিত প্রভুত্ব শুধু আল্লাহর
যখন আকাশের বিশালতা থরথর করে কাঁপে, পাহাড়ের গর্বিত শিখর নত হয়, তখন একটি নাম হৃদয়ের গভীরে শিহরণ জাগায়, সেটি হলো আল–কাহহার। তিনি আল্লাহ, যিনি সৃষ্টির প্রতিটি কণাকে তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর সামনে কোনো শক্তি টিকে না, কোনো অহংকার টেকে না।
তিনি সেই সত্তা, যিনি অত্যাচারীদের ধূলিসাৎ করেন, মৃত্যুর মাধ্যমে সবাইকে নতজানু করেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বচরাচর পরিচালিত হয়। আল–কাহহার নামটি শুধু তাঁর শক্তির প্রকাশ নয়; বরং আমাদের জীবনকে আলোকিত করার এক আধ্যাত্মিক পথনির্দেশ। আসুন, এই নামের গভীর তাৎপর্যে ডুব দিই, যা আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঞ্চার করে।
আল–কাহহার আল্লাহর সেই গুণ, যা তাঁর সর্বোচ্চ প্রভুত্ব ও অপরিমেয় ক্ষমতার কথা বলে। তিনি সেই সত্তা, যাঁর হাতে সমগ্র সৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত।
বলো, বিভিন্ন ইলাহ ভালো, না একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহ?সুরা রাদ, আয়াত: ১৬পবিত্র কোরআনে এ নামটি ছয়বার উল্লেখিত হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি তাঁর আল–ওয়াহিদ নামের সঙ্গে জুড়ে এসেছে। সুরা আর–রাদে বলা হয়েছে, ‘বলো, বিভিন্ন ইলাহ ভালো, না একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহ?’ (আয়াত: ১৬)
আবার সুরা ইবরাহিমে বলা হয়েছে, ‘এবং তারা সবাই একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।’ (আয়াত: ৪৮)
এই আয়াতগুলো আমাদের হৃদয়ে গেঁথে দেয় যে তিনি একক এবং তাঁর ক্ষমতার সামনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি সেই সত্তা, যাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘আল–কাহহার তিনি, যিনি অহংকারীদের শাস্তির মাধ্যমে নত করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সব সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর মহিমার সামনে সবকিছু অসহায়।’ (আল–সালাবি, কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৩৬)
তিনি সেই সত্তা, যাঁর ক্ষমতা কোনো সীমার মধ্যে বাঁধা নয়। পবিত্র কোরআন বলে, ‘কোনো প্রাণী নেই, যার কপাল তাঁর হাতে নেই। তাঁর হুকুম তাতে চলে এবং তাঁর ফয়সালা তাতে ন্যায়পরায়ণ।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৫৬)
এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নেই—না আমাদের জীবন, না আমাদের মৃত্যু।
আল–কাহহার ও আল–ওয়াহিদ নামের সংযোগ একটি অপূর্ব সত্য উন্মোচন করে। আল্লাহর একত্ব তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যিনি সবকিছুর ওপর অপ্রতিরোধ্য, তিনিই একক। ক্ষমতা ও একত্ব একে অপরের পরিপূরক। দুটি সমান ক্ষমতাশালী সত্তা কখনোই থাকতে পারে না।’ (তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৩৩)
আল–কাহহার তিনি, যিনি অহংকারীদের শাস্তির মাধ্যমে নত করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সব সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর মহিমার সামনে সবকিছু অসহায়।ইমাম খাত্তাবি (রহ.), কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৩৬পৃথিবীর রাজারা তাদের সেনাবাহিনী ও সমর্থকদের দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর একক সত্তায়, কারও সাহায্য ছাড়াই সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সেই সত্তা, যাঁর কাছে সবাই নতজানু, যিনি কোনো সাহায্যকারীর মুখাপেক্ষী নন।
আল্লাহর এই ক্ষমতা শুধু শাস্তি বা ধ্বংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি অপূর্ব ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তিনি বাতাস সৃষ্টি করেছেন, যা একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি পানি সৃষ্টি করেছেন, যাকে বাতাস প্রভাবিত করে। তিনি আগুন সৃষ্টি করেছেন, যাকে পানি নিভিয়ে দেয়। তিনি লোহা সৃষ্টি করেছেন, যাকে আগুন গলিয়ে দেয়। তিনি পাথর সৃষ্টি করেছেন, যাকে লোহা ভেঙে দেয়।’ (তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৩৩)
এই ভারসাম্য তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার প্রমাণ। তিনি সৃষ্টির প্রতিটি উপাদানকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন, যেন প্রতিটি তাঁর ইচ্ছার অধীনে থাকে।
আরও পড়ুনআল্লাহর ‘আল মুমিন’ নামের মহিমা১৮ জুন ২০২৫তবে আল্লাহর এই অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে অস্বীকার করে না। তিনি আমাদের পছন্দের স্বাধীনতা দিয়েছেন, যার জন্য আমরা জবাবদিহি করব। আমরা যখন কোনো কাজ করি, যেমন ভ্রমণের পরিকল্পনা, খাওয়া বা বিশ্রাম, তখন আমরা তা নিজেদের ইচ্ছায় করি। এই স্বাধীনতা আমাদের দায়িত্বশীল করে। ‘তিনি অপ্রতিরোধ্য, কিন্তু তিনি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। আমাদের কাজ আমাদের পছন্দের ফল।’ (মা’আল্লাহ, সালমান আওদাহ, পৃ. ১০৭)
এই সত্য আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদেরকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির প্রতি সচেতন করে।
পবিত্র কোরআনে এ নামটি ছয়বার উল্লেখিত হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি তাঁর আল–ওয়াহিদ নামের সঙ্গে জুড়ে এসেছে।আল–কাহহার নামটি আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভীতি জাগায়। যখন আমরা জীবনের ঝড়ে হতাশ হই, তখন এ নামটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা আমাদের শেখায় যে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর ইচ্ছার অধীনে। আমরা যখন তাঁর এই নামের প্রতি চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও বিনয় আরও গভীর হয়। তিনি আমাদের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক এবং আমাদের একমাত্র উপাস্য।
এ নামটি আমাদের জীবনে একটি আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের শেখান যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নির্ভর করা আমাদের কর্তব্য। তাঁর ক্ষমতার সামনে আমরা নতজানু হই, তাঁর প্রভুত্বের সাক্ষ্য দিই। তিনি আল–কাহহার, যিনি অপ্রতিরোধ্য, একক ও অতুলনীয়। তাঁর মহিমার কাছে আমাদের হৃদয় নুয়ে পড়ে এবং আমরা তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাই।
সূত্র: আল–জাজিরা ডট নেট। অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনইসমে আজমের শক্তি ও রহস্য৩০ জুন ২০২৫