জুলাই আন্দোলনকারীদের দেশ ছাড়তে বলা শিক্ষকদের পদোন্নতি, ক্ষুব্ধ শ
Published: 5th, July 2025 GMT
জুলাই গণহত্যায় সমর্থনকারী ও আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়া করার হুমকি দেওয়া শিক্ষকদের চলতি জুলাই মাসে পদোন্নতি দিয়েছে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি) প্রশাসন। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশে রিজেন্ট বোর্ডের ৪০তম সভায় শিক্ষকদের পদোন্নতি বিষয়টি জানানো হয়। এর মধ্যে দুইজন বিতর্কিত শিক্ষক বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তাকে সহযোগী অধ্যাপক ও বিজিই বিভাগের প্রভাষক ইমদাদুল হক সোহাগকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন চলাকালে সরাসরি বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই মাসে তাদের পদোন্নতি দেওয়ায় জুলাই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
আশুরা: শোক, শিক্ষা ও আত্মত্যাগের চিরন্তন প্রতীক
সিকৃবির প্রধান ফটকের নাম ‘জুলাই ৩৬’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ কোটাবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যখন একীভূত, তখন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কঠোর দমন-পীড়ন শুরু করে। সেখানে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নায্য অধিকারের পক্ষে থাকার কথা থাকলেও কিছু শিক্ষক স্বৈরাচারের দালালিতে ব্যস্ত ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, যিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে দেশ ছাড়ার হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করেন।
পদোন্নতি পাওয়া অপরজন বিজিই বিভাগের প্রভাষক ইমদাদুল হক সোহাগের বিরুদ্ধে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় দাঁড়ি রাখলে হল থেকে বের করে দেওয়া ও সাতক্ষীরা জামায়াতের এলাকা বলে শিক্ষার্থীদের মার্ক শূন্য দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননারও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন) সহ-সভাপতি থাকা অবস্থায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় সংবাদের শিরোনামও হতে হয়। এমনকি জুলাই গণহত্যা চলার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা দিয়ে সহায়তার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ওবাইদুল ইসলাম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি বিরোধিতা করার পরেও দুইজন শিক্ষক কীভাবে পদোন্নতি পেতে পারে! এটা আমাদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। স্বৈরাচারমুক্ত ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা তাদের ন্যূনতম অনুশোচনার লেশমাত্র দেখতে পাইনি।”
তিনি বলেন, “আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির দুইটি গ্রুপ ছিল। এ দুই গ্রুপই ‘চেতনার বীজ’ বপন করে ফ্যাসিবাদের বৈধতা দিয়ে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। এখনো সেই ধারাবাহিকতা চলমান। যে শিক্ষক সরাসরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, ‘চেতনার ব্যবসা’ করতে পারে, তার পদোন্নতি এই পবিত্র জুলাই আন্দোলনকে অপমান করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে আজ তিনি সহযোগী অধ্যাপক! নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে যার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, সে কখনোই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার ন্যূনতম যোগ্যতাও রাখে না। ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে যখন কোটা আন্দোলনে একের পর এক লাশ পড়ছিল, তখন এই শিক্ষকরাই ছাত্রদের কটাক্ষ করে পোস্ট করেছে, হুমকি দিয়েছে।”
এ শিক্ষার্থী আরো বলেন, “আমরা জুলাই আন্দোলনে যারা সরাসরি বিরোধিতা করেছে, তাদের তালিকা কয়েক মাস আগেই জমা দিয়েছি। তারপরও কীভাবে তারা পদোন্নতি পায়? আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই অবিলম্বে এই পদোন্নতি বাতিল করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে, এই ক্যাম্পাসে আবারো ‘জুলাই’ নেমে আসবে।”
গোবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় শুভ বলেন, “২৪ পরবর্তী সময়ে এমনটা দুঃখজনক। এটা ২৪ এর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী ছাড়া আর কিছুই নয়। উনারও হয়তো ভুলে গেছেন, উনারা ২৪ এর রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দায়িত্বে এসেছেন।”
জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষিকাকে নিয়ে অভিযোগ হচ্ছে, তাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে আরো এক বছর আগে। যেহেতু গত ১ বছর রিজেন্ট বোর্ড হয়নি। তাই বর্তমানের রিজেন্টবোর্ডে আগের রিকমেন্ডেশন কার্যকর করা হয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে কোনো বডির মাধ্যমে আমরা লিখিত পাইনি যে, তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আর তারা এখানে প্রতিদিন আসে, ক্লাস নেয়, ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছে। সে ক্ষেত্রে তারা তো কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমরা তো বাধা দিতে পারি না। তাহলে আমাদের নামে কেস হয়ে যাবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ঢালাও যে লিখিত অভিযোগ দিছে, তাতে তো আর প্রমাণ হয় না সে অপরাধী। প্রমাণ হবে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫