নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দিষ্ট দিনের কথা বলেননি: জামায়াত
Published: 27th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা দিনের কথা বলেননি।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রফিকুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রধান উপদেষ্টা এটি বলেননি।’
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৪টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।
আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘গতকালের এ বৈঠকের আগে আরও দুটি বৈঠক হয়েছিল। এর প্রথম বৈঠকে আমি নিজেই ছিলাম। নির্বাচনী সংলাপের জন্য এই বৈঠক হয়নি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মাইলস্টোন স্কুলের ঘটনায় যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার পেছনে যে নানা ষড়যন্ত্র কার্যকর ছিল, এটাকে সামনে রেখে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে মিটিং ডেকেছিলেন। প্রতিটি মিটিংয়ের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ওখানে কোনো নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
নারী আসনের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘১০০ নারী প্রতিনিধি থাকার বিষয়ে আমরা একমত। তবে এটি হবে ৩০০ আসনের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির বিষয়ে আমরা ঐকমত্য পোষণ করেছি।’
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা বলেছি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি প্রতিস্থাপন করতে হবে। অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি উল্লেখিত হবে। এখানে কয়টি দল আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের বিষয়টির বিরোধিতা করেছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের বিষয়টি সংবিধানের মূলনীতিতে সংযোজন করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে।’
পুলিশ কমিশনের বিষয়ে জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি। এ কমিশন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশ যাতে আইনানুগভাবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করা।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা
প্রাণিসম্পদ খাতের সমতা ও কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ অনুষদের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপাচার্য বিদেশ ভ্রমণে থাকায় তার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান।
এরপর আবার মিছিল নিয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের করিডর প্রদক্ষিণ করে পশুপালন অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে একটি স্মারকলিপি অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন কাছে প্রদান করেন তারা।
আরো পড়ুন:
কুবির নজরুল হল থেকে গুলি ও গাঁজা উদ্ধার
৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, দেশে বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রিকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে একটি ডিগ্রিতে প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন। অথচ বাকৃবিতে এখনো দুটি অনুষদ পৃথকভাবে থাকায় অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটরা চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলিত হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯ অনুযায়ী কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের প্র্যাকটিসের স্বীকৃতি থাকলেও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্র একেবারেই সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিভিএম বা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি, ডেইরি, নিউট্রিশন ও জেনেটিক্স বিভাগের প্রভাষক পদে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি বাদ দিয়ে ডিভিএম ও কম্বাইন্ডদের উল্লেখ্য করে সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। অথচ উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রির মূল পাঠ্যসূচি। এমনকি ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনেও ভেটেরিনারির সংজ্ঞাতে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সব বিষয় প্রবেশ করিয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মপরিধি একদম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষা নিচ্ছি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বপূর্ণ কোর বিষয়ের ওপর। অথচ বাস্তবে আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের সিনিয়ররাও চরম হতাশা ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতে হলে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্সের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা সময়ের দাবি। প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন- দুই ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, “আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদ ৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা কম্বাইন্ড করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা একমত না। উপাচার্য স্যার বিদেশ থেকে এসে আমাদের ডাকলে আমরা সেভাবে আলোচনা করব।”
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির স্মারকলিপিটি হাতে পেয়েছি। এখানে দুই অনুষদের সমঝোতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটি শেষে দেশে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
সোমবার থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী