রাজনৈতিক ক্ষমতা যেন আজীবনের পুঁজি না হয় এই অভিন্ন উপলব্ধিকে সামনে রেখে দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারবেন। একইসঙ্গে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবেও একমত রাজনৈতিক দলগুলো। 

রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে এই ঐতিহাসিক মতৈক্যে পৌঁছে দলগুলো।

বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি দল অংশ নেয়।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড.

আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘আমরা একটি বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ঘোষণা করা হয়নি। তা হলো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এখন সেটা লিখিতভাবে জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ সময় বলেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছি—১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। এটা আমাদের প্রস্তাব। তবে সংবিধান সংশোধনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে যুক্তিসঙ্গত কাঠামো না হলে আগের শর্ত আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’’

এদিনের বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব নিয়ে। কমিশনের পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো উপস্থাপন করা হয়, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী পুলিশ কমিশনের প্রধান হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতি (৭২ বছরের নিচে)। সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (৬২ বছরের নিচে)।

কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের প্রতিনিধি থাকবেন, যার মধ্যে থাকবেন স্পিকার, বিরোধী দলীয় ডেপুটি স্পিকার, মানবাধিকারকর্মী ও সিনিয়র আইনজীবী। অন্তত ২ জন নারী সদস্য বাধ্যতামূলক।

কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনের কার্যকারিতা, জবাবদিহিতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নির্ধারিত হবে একটি স্বতন্ত্র আইনের মাধ্যমে। কমিশনের লক্ষ্য হবে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব, জবাবদিহিতা এবং জনগণের আস্থা নিশ্চিত করা।

ড. আলী রীয়াজ জানান, সোমবারের মধ্যেই সব দলের কাছে জাতীয় সনদের খসড়া পাঠানো হবে। সেখানে এই দুই প্রস্তাবসহ সংলাপের আলোচ্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আগস্টের মধ্যেই একটি ঐকমত্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক রোডম্যাপ প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।


 

ঢাকা/এএএম//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব র জন ত ক র প রস ত ঐকমত য ১০ বছর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা

প্রাণিসম্পদ খাতের সমতা ও কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ অনুষদের শিক্ষকরা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপাচার্য বিদেশ ভ্রমণে থাকায় তার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান।

এরপর আবার মিছিল নিয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের করিডর প্রদক্ষিণ করে পশুপালন অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে একটি স্মারকলিপি অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন কাছে প্রদান করেন তারা। 

আরো পড়ুন:

কুবির নজরুল হল থেকে গুলি ও গাঁজা উদ্ধার

৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্মারকলিপিতে তারা বলেন, দেশে বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রিকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে একটি ডিগ্রিতে প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন। অথচ বাকৃবিতে এখনো দুটি অনুষদ পৃথকভাবে থাকায় অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটরা চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলিত হচ্ছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯ অনুযায়ী কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের প্র্যাকটিসের স্বীকৃতি থাকলেও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্র একেবারেই সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিভিএম বা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি, ডেইরি, নিউট্রিশন ও জেনেটিক্স বিভাগের প্রভাষক পদে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি বাদ দিয়ে ডিভিএম ও কম্বাইন্ডদের উল্লেখ্য করে সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। অথচ উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রির মূল পাঠ্যসূচি। এমনকি ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনেও ভেটেরিনারির সংজ্ঞাতে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সব বিষয় প্রবেশ করিয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মপরিধি একদম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষা নিচ্ছি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বপূর্ণ কোর বিষয়ের ওপর। অথচ বাস্তবে আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের সিনিয়ররাও চরম হতাশা ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতে হলে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্সের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা সময়ের দাবি। প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন- দুই ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালু করতে হবে।

এ বিষয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, “আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদ ৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা কম্বাইন্ড করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা একমত না। উপাচার্য স্যার বিদেশ থেকে এসে আমাদের ডাকলে আমরা সেভাবে আলোচনা করব।” 

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির স্মারকলিপিটি হাতে পেয়েছি। এখানে দুই অনুষদের সমঝোতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটি শেষে দেশে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

সোমবার থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত
  • বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা
  • জুলাই সনদের খসড়া গ্রহণ করতে পারি না: এনসিপি
  • জুলাই সনদের খসড়া প্রস্তুত, পুলিশ কমিশনে ঐকমত্য
  • নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দিষ্ট দিনের কথা বলেননি: জামায়াত