রাশিয়ার জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা অ্যারোফ্লতের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত সাত হাজার সার্ভার ধ্বংস ও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে হামলাকারী হ্যাকার গোষ্ঠী। এ ঘটনার জেরে গতকাল সোমবার অ্যারোফ্লতের অন্তত ৪০টি ফ্লাইট বাতিল এবং আরও কয়েকটি ফ্লাইটে বিলম্ব ঘটে।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘সাইলেন্ট ক্রো’ নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ। তাদের দাবি, এক বছর ধরে চালানো একটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে তারা অ্যারোফ্লতের নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়ে। এ হামলায় বেলারুশভিত্তিক সাইবার পার্টিজানস নামের আরেকটি গ্রুপ সহযোগিতা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

হ্যাকারদের পক্ষ থেকে অনলাইনে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সার্ভারে আঘাত হেনেছি ও অ্যারোফ্লতের ডিজিটাল অবকাঠামো ধ্বংস করেছি। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কম্পিউটারেও আমরা প্রবেশ করেছি।’ তারা অ্যারোফ্লতের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছে। এমনকি বিমান সংস্থাটির যাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য অর্থাৎ যাঁরা কখনো অ্যারোফ্লতে চড়েছেন, তাঁদের সব তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মস্কো। দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরই মধ্যে একটি তদন্ত শুরু করেছে। রুশ পার্লামেন্ট সদস্য আন্তন গোরেলকিন বলেন, ‘আমরা একটি সুপরিকল্পিত ডিজিটাল হামলার শিকার হয়েছি। যারা এ হামলার দায় স্বীকার করেছে, তাদের পেছনে শত্রুরাষ্ট্রগুলোর মদদ থাকতে পারে।’

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ হামলাটিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বলেন, দেশের যেসব বড় প্রতিষ্ঠান জনগণকে সেবা দিয়ে থাকে, তাদের জন্য সাইবার হুমকি এখন একটি স্থায়ী ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যারোফ্লত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাইবার হামলার পর প্রতিষ্ঠানটির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছেন। ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের কারণে যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার পাশাপাশি টিকিট ফেরত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ভ্রমণকারীদের দুর্ভোগ কমাতে অন্য এয়ারলাইনসের ফ্লাইটেও আসন বরাদ্দের চেষ্টা চলছে।

সাইলেন্ট ক্রো এ বছরের শুরু থেকে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি রিয়েল এস্টেট ডেটাবেজ, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান, একটি বিমা কোম্পানি, মস্কো নগর প্রশাসনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও কিয়া মোটরসের রুশ শাখা। এসব হামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। সাইলেন্ট ক্রো ও সাইবার পার্টিজানসের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির শেষাংশে লেখা হয়, ‘গৌরব ইউক্রেনের! দীর্ঘজীবী বেলারুশ!’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ল ইট

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ