রাশিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লতে সাইবার হামলা, ৭ হাজার সার্ভার ধ্বংসের দাবি
Published: 29th, July 2025 GMT
রাশিয়ার জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা অ্যারোফ্লতের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত সাত হাজার সার্ভার ধ্বংস ও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে হামলাকারী হ্যাকার গোষ্ঠী। এ ঘটনার জেরে গতকাল সোমবার অ্যারোফ্লতের অন্তত ৪০টি ফ্লাইট বাতিল এবং আরও কয়েকটি ফ্লাইটে বিলম্ব ঘটে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘সাইলেন্ট ক্রো’ নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ। তাদের দাবি, এক বছর ধরে চালানো একটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে তারা অ্যারোফ্লতের নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়ে। এ হামলায় বেলারুশভিত্তিক সাইবার পার্টিজানস নামের আরেকটি গ্রুপ সহযোগিতা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
হ্যাকারদের পক্ষ থেকে অনলাইনে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সার্ভারে আঘাত হেনেছি ও অ্যারোফ্লতের ডিজিটাল অবকাঠামো ধ্বংস করেছি। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কম্পিউটারেও আমরা প্রবেশ করেছি।’ তারা অ্যারোফ্লতের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছে। এমনকি বিমান সংস্থাটির যাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য অর্থাৎ যাঁরা কখনো অ্যারোফ্লতে চড়েছেন, তাঁদের সব তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মস্কো। দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরই মধ্যে একটি তদন্ত শুরু করেছে। রুশ পার্লামেন্ট সদস্য আন্তন গোরেলকিন বলেন, ‘আমরা একটি সুপরিকল্পিত ডিজিটাল হামলার শিকার হয়েছি। যারা এ হামলার দায় স্বীকার করেছে, তাদের পেছনে শত্রুরাষ্ট্রগুলোর মদদ থাকতে পারে।’
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ হামলাটিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বলেন, দেশের যেসব বড় প্রতিষ্ঠান জনগণকে সেবা দিয়ে থাকে, তাদের জন্য সাইবার হুমকি এখন একটি স্থায়ী ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যারোফ্লত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাইবার হামলার পর প্রতিষ্ঠানটির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছেন। ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের কারণে যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার পাশাপাশি টিকিট ফেরত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ভ্রমণকারীদের দুর্ভোগ কমাতে অন্য এয়ারলাইনসের ফ্লাইটেও আসন বরাদ্দের চেষ্টা চলছে।
সাইলেন্ট ক্রো এ বছরের শুরু থেকে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি রিয়েল এস্টেট ডেটাবেজ, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান, একটি বিমা কোম্পানি, মস্কো নগর প্রশাসনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও কিয়া মোটরসের রুশ শাখা। এসব হামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। সাইলেন্ট ক্রো ও সাইবার পার্টিজানসের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির শেষাংশে লেখা হয়, ‘গৌরব ইউক্রেনের! দীর্ঘজীবী বেলারুশ!’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল ইট
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।