ঢাকায় আজ তিন সমাবেশ, দুই পরীক্ষা, বিকল্প কোন পথে যাবেন
Published: 3rd, August 2025 GMT
রাজধানী ঢাকায় আজ রোববার জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সমাবেশ। এনসিপির সমাবেশ হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আর ছাত্রদলের সমাবেশ হবে শাহবাগে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সাইমুম শিল্পগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান চলমান রয়েছে।
এ ছাড়া আজ ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শাহবাগ ক্রসিং এড়িয়ে বিকল্প পথে যান চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।
এইচএসসি ও সমমান এবং বিসিএস পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। দুই সমাবেশ ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি চৌকি বাড়ানো হয়েছে।
কখন, কোথায়, কোন সমাবেশদুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘ছাত্র সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসমাবেশ হবে। আর সাইমুম শিল্পগোষ্ঠীর আয়োজনে ১ থেকে ৪ আগস্ট প্রতিদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট ‘জুলাই জাগরণ’ অনুষ্ঠান চলছে।
কোথায় কোন বিকল্প পথে যাবেনগতকাল শনিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.
সোনারগাঁও ক্রসিং বা বাংলামোটর ক্রসিং হয়ে উত্তর দিকে থেকে আসা গাড়িগুলো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সোজা শাহবাগের দিকে না গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিয়ে হেয়ার রোড বা মিন্টো রোড হয়ে যাতায়াত করবে। সায়েন্স ল্যাব ক্রসিং থেকে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে আসা গাড়িগুলো কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে নীলক্ষেত বা পলাশী হয়ে অথবা কাঁটাবন মোড় থেকে বাঁয়ে মোড় নিয়ে হাতিরপুল রাস্তা হয়ে বাংলামোটর লিংক রোড দিয়ে চলাচল করবে।
এ ছাড়া হাইকোর্ট কদম ফোয়ারা ক্রসিং হয়ে আসা গাড়িগুলো মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হেয়ার রোড বা শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি (মগবাজার) রোড হয়ে চলাচল করবে। অপর দিকে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং হয়ে উত্তর দিকে আসা গাড়িগুলো মৎস্য ভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলাচল করবে। নীলক্ষেত ক্রসিং বা দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে আসা গাড়িগুলো টিএসসি বা রাজু ভাস্কর্য ক্রসিংয়ে এসে শাহবাগের দিকে না গিয়ে দোয়েল চত্বর বা নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে চলাচল করবে।
বাড়তি নিরাপত্তাদুই সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই দুটি সমাবেশে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা যাতে করতে না পারে, এ বিষয়ে দুই দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্ব স্ব দল থেকে।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, এনসিপি ও ছাত্রদলের সমাবেশস্থলের মধ্যবর্তী স্থান টিএসসি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে। তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি আজ সকাল থেকে সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশনস) মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে ঢাকাসহ সারা দেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তৎপরতার ওপরও নজরদারি করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হব গ র দ ক ছ ত রদল র অন ষ ঠ ব কল প পর ক ষ ড এমপ এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে
পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”
এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।
ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক
আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”
বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।
জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা
রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”
এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”
এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে
শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ