হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরে ঝাঁপ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
Published: 4th, August 2025 GMT
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতা হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ৩টায় উপজেলার বাগহাতা হাওরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পালিয়ে যাওয়া আবদুল মজিদ বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি উপজেলার বাগাহাতা গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে প্রাণ হারান ৯ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার একজন আসামি আবদুল মজিদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ প্রত্যন্ত ভাটি এলাকা কাগাপাশা ইউনিয়নের বাগাহাতা গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদকে গ্রেপ্তার করে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে একটি নৌকায় করে বানিয়াচং থানার উদ্দেশে রওনা হয়। তাঁদের নৌকা উপজেলার বাগাহাতা হাওরে দিয়ে আসার সময় আবদুল মজিদের স্বজন ও অনুসারীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরের পানিতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান আবদুল মজিদ। পরে খবর পেয়ে বানিয়াচং থেকে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালালেও তাঁর কোনো সন্ধান পাননি।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) প্রবাস কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মজিদ উপজেলার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ৯ হত্যাকাণ্ডের মামলার একজন আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে আসার সময় তাঁর কিছু আত্মীয়স্বজন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি কৌশলে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। তাঁকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দল কাজ করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র ব হ তকড় আওয় ম র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্যের সুপারিশ সহ–উপাচার্যের ফেসবুকে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের একটি ফেসবুক স্টোরি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একজন প্রার্থীর জন্য জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এক সংসদ সদস্যের (এমপি) সুপারিশের কাগজ স্টোরিতে আপলোড করা হলে এ আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্টোরিটি আপলোড করা হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে। স্টোরিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক পদে জন্য আজমীরা আরেফিন নামের একজন প্রার্থীর প্রবেশপত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমানের সুপারিশ।
স্টোরিটি আপলোড হওয়ার কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান সেটি সরিয়ে ফেলেন। একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ফেসবুক স্টোরিতে একজন আবেদনকারীর প্রবেশপত্র ভুলবশত এসে গেছে।...প্রতিদিনই অনেক আবেদনকারী বা তাঁদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সিভি-প্রবেশপত্র দিয়ে যায়। ...একজন আলামনাস (সাবেক এমপি) ফোন করে উনার এলাকার একজন আবেদনকারীর কথা বলেন। আমার অফিস এবং ফোনে এ রকম ডজনখানেক সুপারিশ আছে। তবে এগুলো কোনোভাবেই লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রভাব ফেলে না। আশা করি বিষয়টি নিয়ে কেউ ভুল বুঝবেন না। ভুলবশত এই স্টোরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
মো. লতিফুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। তিনি ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের পরপর দুবারের সভাপতি ছিলেন। পরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
সুপারিশের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমান বলেন, চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্রে সুপারিশ করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এটা সত্য যে ওই প্রার্থীর বিষয়ে সহ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে (ফরিদ উদ্দিন খান) বলেছিলাম, বিগত দিনে ভাইভাগুলোতে অনেক বাজে চর্চা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এটা চাই না। আপনি এই প্রার্থীর আবেদনপত্রটা দেখবেন। আবেদনকারীর বিভাগের ফলাফল অনেক ভালো।’
এ ঘটনার পর মেহেদী হাসান নামে একজন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় স্যার, কারা কারা আপনার কাছে সুপারিশ করেছে? আপনি যদি সত্যিই অসৎ না হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে নিশ্চয়ই আপনার দ্বিধা থাকার কথা নয়। আর যদি সেটা প্রকাশ না করতে পারেন; তাহলে তার মানে এটাই দাঁড়ায়, আপনি নিজে দুর্নীতিবাজ এবং দুর্নীতিবাজদের পাহারাদার। আপনি বিশ্বাসঘাতক। পারলে সুপারিশদাতাদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করুন।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল লিখেছেন, ‘চাকরি যদি জামায়াত নেতার রেফারেন্সেই দেন...সে ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার নাটক কেন? নাকি লিখিত পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রার্থীকে নকআউট করার নিঞ্জা টেকনিক?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী লিখেছেন, ‘সুপারিশে আসা বাকি সমস্ত প্রবেশপত্র পোস্ট করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জানতে চাই কারা এইটারে বিশ্ববিদ্যালয় না ভাইভা দলীয় গোয়ালঘর বানাতে চায়।’
উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী মিথ্যাবাদী না মাননীয় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব স্যার?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘কাল রাতে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয়ের ছেলে ছাগল–কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। গেমস খেলতে গিয়ে বাবার ফোন থেকে একজন জামায়াতপন্থী সাবেক সংসদ সদস্যের রেফারেন্সসহ প্রবেশপত্র স্টোরি দিয়ে ফেলে। স্যার ক্লারিফিকেশনে লিখলেন এমন অনেক রেফারেন্স ওনার হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল বা সরাসরি আসে; কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনাদের কাছে রেফারেন্স দেওয়ার সাহস কেন পাবে?’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে একটা পরিবর্তন এলেও আমাদের চিন্তাগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সত্য কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশ, তদবির এগুলো কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি।’