জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে দায় এড়াতে ওই শিক্ষার্থীকে উল্টো ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে তার মাকে গালিগালাজ করেছেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় গত রোববার দুপুরে শিক্ষার্থীর মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে আরও ২৪ জন অভিভাবকের স্বাক্ষর আছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসী তাঁর বদলির দাবি তুলেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। ওই দিন ক্লাসে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া লেখার নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষক। শিশুটির লেখায় কয়েকটি বর্ণ ছোট-বড় হওয়ায় শিক্ষক তাকে বেত্রাঘাত করেন। এতে তার পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাগ পড়ে। পরে সমাবেশে লাইন বাঁকা হওয়ায় শিশুটিসহ কয়েক শিক্ষার্থীকে আবারও বেত্রাঘাত করা হয়।

বাড়ি ফিরে শিশুটি মায়ের কাছে বিষয়টি জানায়। তার মা স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে কারণ জানতে চাইলে গ্রামবাসীও সেখানে জড়ো হন। তখন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম দ্বিতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে তার মাকে গালিগালাজ করেন। এতে অভিভাবক ও গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।

শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমার ছেলে কান্না করতে করতে বাড়িতে এসে মারধরের কথা বলে। আমি স্কুলে গিয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, “আপনার ছেলে এক মাস আগে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল।” তিনি আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে আমাকেও গালিগালাজ করেছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র কীভাবে চাঁদা চাইতে পারে, তা ভেবে হতবাক হয়েছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম কবির বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তাঁর এই আচরণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চাইবে—এটা অবিশ্বাস্য।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার না করে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী এক মাস আগে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আর সেদিন ক্লাসে হট্টগোল করায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটু শাসন করেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্রশংসাপত্র কম্পিউটার থেকে তৈরি করতে খরচ হয়, তাই অল্প পরিমাণে টাকা নেওয়া হয়। তবে এটা সবার কাছ থেকে নেওয়া হয় না।’ দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চাঁদা চেয়েছে—বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে।’

এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি