২ খাদ্য কর্মকর্তাকে হেনস্তার অভিযোগ, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
Published: 19th, August 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডিএম শাফিকুল ইসলাম শাফিকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন ও খাদ্য পরিদর্শক আমিরুল ইসলামকে হেনস্তা এবং এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাতে জেলা বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপি-ছাত্রদলের ৮ জনের নামে মামলা, ওয়ার্ড সভাপতি গ্রেপ্তার
শেখ মুজিবকে জাতির পিতা দাবি করে পোস্ট, ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাফিকুল ইসলাম শাফিকে আউচপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।
শাফিকুল ইসলাম আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তার ভাই ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। আওয়ামী সরকারের পতনের পর এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, সরকারি দপ্তরগুলোতে খবরদারি ও ক্যাডার লালনের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে আউচপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শাফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তার ১৫-২০ জন অনুসারী বাগমারা উপজেলা পরিষদে যান। চেয়ারম্যান শাফিকুল উপজেলা পরিষদের দোতলায় একটি কক্ষে অবস্থান করেন। তার অনুসারীরা চারতলায় উঠে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিনের কক্ষে যান। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের দাবি জানান।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একই তলায় অবস্থিত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তরিকুল ইসলামের কক্ষে আশ্রয় নেন। পেছন পেছন চেয়ারম্যানের অনুসারীরাও প্রকল্প কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রককে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় পাশের কক্ষে থাকা খাদ্য পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম খাদ্য নিয়ন্ত্রককে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে যান। সেখানে থাকা চেয়রাম্যানের লোকজন আমিরুল ইসলামের গলা টিপে ধরেন।
এ সময় একটি জাতীয় পত্রিকার বাগমারা প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তার মোবাইল কেড়ে নেন হামলাকারীরা। কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান শাফিকুল ঘটনাস্থলে পৌঁছে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ওপর চড়াও হন এবং অশ্লীল ভাষায় তাকে গালাগাল করেন। পরে তিনি তার অনুসারীদের কাছে থাকা সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ফেরত দেন।
অভিযোগের বিষয়ে ডিএম শাফিকুল ইসলাম বলেন, “গতকালের ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততাই নাই। কিছু লোক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগে অনিয়মের প্রতিবাদ করতে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন খাদ্য কর্মকর্তা আমাকে ডাকেন। আমি কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। তারপরও আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে চিঠি দেখেছি।”
এ বিষয়ে কথা বলতে ডিএম শাফিকুল ইসলামের ভাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়াকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ শ ফ ক ল ইসল ম ল ইসল ম র কর মকর ত র অন স র ব এনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।