দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যেই মনোনয়ন বিতরণ ও দাখিলের কাজ শেষ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

এর মধ্যেই রাকসু ভবন ও আবাসিক হলগুলোর ছাত্র সংসদ কক্ষের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাকসু ভবনে নেই কোনো নামফলক এবং এর অভ্যন্তরের অবস্থাও জরাজীর্ণ।

আরো পড়ুন:

রাকসুতে ছাত্রশিবিরের প্যানেলে জুলাই বিপ্লবে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুব

ফলাফল না দেওয়া পর্যন্ত রাবির আরবি বিভাগে শাটডাউন ঘোষণা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের পেছনে অবস্থিত রাকসু ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির বাইরে নেই কোনো নামফলক। ফলে বাইরে থেকে এটি যে রাকসু ভবন, তা বোঝার কোনো উপায় নেই। ভবনটির ভেতরের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ময়লা-আবর্জনা ও অব্যবহৃত আসবাবপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মাঝে মাঝে শুধু বাইরের অংশে রং করা হলেও ভেতরের সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

রাকসু ভবনের দ্বিতল ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কিছু পুরোনো ও অকেজো আসবাবপত্র। তবে এর বেশিরভাগ কক্ষই বর্তমানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ব্যবহার করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন, উদীচী সাংস্কৃতিক সংসদ, অরণি সাংস্কৃতিক সংসদ, অনুশীলন নাট্যদল, তীর্থক নাটক, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অ্যাডুকেশন ক্লাব, সাংস্কৃতিক জোট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি। এমনকি রাকসুর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কক্ষও খালি নেই।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে নির্বাচনকে ঘিরে এত আমেজ, সেই রাকসু ভবনেরই এমন করুণ অবস্থা হতাশাজনক। ভবনে চেয়ার-টেবিল বা বসার মতো কোনো স্থান নেই। দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা প্রশাসনের ভবন সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে।

এ বিষয়ে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান জানিয়েছেন, রাকসু ভবন সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে থাকা বিভিন্ন সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণে এই উদ্যোগগুলো আগে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই নামফলক স্থাপনসহ সংস্কার কাজ শেষ করা হবে।

রাকসু ভবনের পাশাপাশি হল সংসদগুলোর অবস্থা আরো করুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৭টি (১১টি ছেলেদের ও ছয়টি মেয়েদের) হলে এখন আর কোনো ছাত্র সংসদ কক্ষের অস্তিত্ব নেই। অনেক হলে পুরোনো ছাত্র সংসদ কক্ষগুলো এখন পত্রিকা রুম বা রিডিং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

জামিরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর আগে নির্বাচন হওয়ায় অনেক হলেই ছাত্র সংসদ কক্ষগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমি আমার হলে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, অন্যান্য হলের প্রাধ্যক্ষরাও দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “রাকসু ভবনের সংস্কার এবং নামফলক স্থাপনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে কোথায় পুনর্বাসন করা যায় তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন মফলক র জন য অবস থ ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।

প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতা

বামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।

এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।

এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।

দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’

শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।

শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।

বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।

বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
  • তিন ভবনেই ১৫টি, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় কেন পল্টনকেন্দ্রিক
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান