জীবন এখন ভ্যাটময়। দৈনন্দিন জীবনে এমন কোনো জায়গা নেই, সেখানে ভ্যাটের আধিপত্য কম। প্রতিদিনের জীবনযাপনের প্রতি পদক্ষেপে নাগরিকদের গুনতে হচ্ছে ভ্যাটের টাকা। সকালে ঘুম থেকে ওঠে সারা দিন কর্মব্যস্ত সময় পার করে রাতে ঘুমানোর আগপর্যন্ত নানা ধরনের পণ্য ব্যবহার করতে হয়; বিভিন্ন সেবা নিতে হয়। এমন অনেক পণ্য ও সেবার ওপর প্রতিদিন বিভিন্ন হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। 

সর্বশেষ সংযোজন হলো সরকার এখন নতুন করে শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়েছে। এতে মানুষের ওপর ভ্যাটের চাপ আরও বাড়বে। দৈনন্দিন জীবনযাপনে কোথায় কোথায় মানুষকে ভ্যাট দিতে হয়, তার একটি তালিকা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।  

আপনি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দিনের প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো, দাঁত ব্রাশ। এ জন্য যে পেস্ট ও টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হয়, তাতেও ভ্যাট আছে। টুথপেস্ট ও ব্রাশের উৎপাদন বা আমদানি থেকে ভোক্তাপর্যায় পর্যন্ত যত ভ্যাট আছে, তা আসলে ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হয়। এরপর গোসল থেকে শুরু করে টয়লেটের অন্যান্য কাজ শেষ করতে প্রতিদিনের ব্যবহার্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সাবান, টিস্যু, শ্যাম্পু ইত্যাদি। সেখানেও ভ্যাট আছে। নতুন করে সব ধরনের টিস্যু পেপারের ওপর ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে টিস্যু ব্যবহারে আগের চেয়ে খরচ বাড়বে।  

টয়লেটের কাজ সেরে আপনি হয়তো বসবেন নাশতার টেবিলে। নাশতায় পাউরুটি, জেম-জেলি কিংবা বিস্কুট যদি থাকে আপনার নাশতার তালিকায়, তাহলে সেখানেও গুনতে হবে ভ্যাট। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর যেসব পণ্যে নতুন করে ভ্যাট বাড়িয়েছে, তাতে বেকারি ও কনফেকশনারি পণ্যও রয়েছে। বেকারির মালিকেরা বলছেন, ভ্যাটের হার বৃদ্ধির ফলে বেকারি পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে। ফলে নাশতার খরচও বেড়ে যাবে আপনার। 

নাশতা সেরে এবার অফিসের দিকে রওনা হলেন। এই যাত্রাপথে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। কারণ, বাস, ট্যাক্সি, সিএনজি ভাড়া—কোনো কিছুর ওপর ভ্যাট নেই। তবে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট বসানোর চেষ্টা ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। সম্প্রতি মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর এক বছরের জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

অফিসে গিয়ে কাজকর্ম করলেন। কাজ শেষ করে দুপুরের খাবারের জন্য রেস্টুরেন্টে গেলেন। পকেটে বাড়তি ভ্যাটের টাকা নিয়ে যেতে হবে। কারণ, সব ধরনের রেস্টুরেন্টের খাবারের বিলের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মানসম্মত বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ ভ্যাটের বাড়তি অর্থ আদায় শুরু করেছে। তাতে আপনার খাবারের বিল ২০০ টাকা হলে আগে ভ্যাট দিতে হতো ১০ টাকা। এখন দিতে হবে ৩০ টাকা। তাতে রেস্তোরাঁয়া খাবারের খরচ বাড়ল ২০ টাকা। অফিসের ফাঁকে যদি কফি পান করতে চান, সেখানেও গুনতে হবে ভ্যাট। 

বিকেলে অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভাবছেন বাসার লোকজনের জন্য কিছু ফলমূল নিয়ে যাবেন। সেখানেও আছে বাড়তি খরচের চাপ। ভ্যাট আইনের আওতায় আমদানি করা ফলে, যেমন আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু, আঙুর, মাল্টার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট তো আছেই। ফলে এসব ফলের দামও বাড়বে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও বাড়তেও শুরু করেছে। এ ছাড়া ফল বাদ দিয়ে বাসার জন্য যদি মিষ্টি নিয়ে ফিরতে চান, তাহলেও বাড়বে খরচ। মিষ্টি কিনতে গেলেই এখন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। আবার কোমল পানীয়ের ওপরও ভ্যাট আছে। 

কর্মব্যস্ত দিন শেষে বাসায় ফিরে মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলবেন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে নাটক–সিনেমা দেখা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুঁ মারবেন? সেখানেও বাড়তি খরচের চাপ আপনার জন্য। কারণ, নতুন করে ভ্যাট আইনের আওতায় মোবাইল ফোনের সিম সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও ভ্যাট থেকে মুক্তি নেই আপনার। এরপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যদের জন্য ওষুধ লাগে, সেখানেও আছে খরচের বাড়তি চাপ। ওষুধ সরবরাহকারী স্থানীয় ব্যবসায়ীর ওপর ৩ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই ভ্যাট ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হবে। এভাবে সারা দিন ভ্যাট আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে আপনাকে। নতুন করে সেই চাপ বাড়বে ভ্যাটের হার বাড়ানোর ফলে।

সামনে ঈদ, পোশাকেও ভ্যাট বাড়ল

সামনে ঈদের মৌসুম শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে নিজের কিংবা পরিবার–পরিজনের পোশাক কেনায়ও খরচ বাড়বে এবার। ব্র্যান্ডের পোশাক ও বড় বড় বিপণিবিতানের বিক্রয়কেন্দ্রের পোশাকের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাটের বাড়তি এই অর্থ আদায় শুরু করেছে। তাতে পোশাক কেনার খরচ বেড়ে যাবে। যত দামি পোশাক কিনবেন, তত বেশি ভ্যাট। 

রান্নাঘরের খরচেও ভ্যাট

মৌলিক খাদ্যপণ্যে ভ্যাট না থাকলে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খাতে ভ্যাট আছে। যেমন কিচেন টিস্যুসহ ধরনের টিস্যুর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের বিল দিতে গেলেও ভ্যাট কাটা হয়। আবার বাড়ির মা-বোনেরা কিংবা মেয়েরা দরজির কাছ থেকে জামাকাপড় বানালে সেখানেও ভ্যাট গুনতে হবে ১৫ শতাংশ হারে।

বিনোদনেও ভ্যাট

শহুরে জীবনে ছুটির দিনে সিনেপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখার একটি নতুন ধারা (ট্রেন্ড) তৈরি হয়েছে। সিনেমা হলের মালিক ও পরিবেশকদের ওপর ভ্যাট আছে। এতে টিকিটের দাম বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের বিনোদনকেন্দ্রেও টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। সেখানেও ভ্যাট দিতে হয়। 

এখন মাঠ ভাড়া করে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের খেলাধুলা আয়োজনও ভ্যাটের আওতাভুক্ত। 

চোখের সমস্যা এখন বলতে গেলে ঘরে ঘরে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—অনেকেই এখন চিকিৎসকের পরামর্শে পাওয়ারের চশমা পরেন। আবার কম্পিউটার ব্যবহার বা পড়াশোনার সময় অনেকে রিডিং গ্লাস ব্যবহার করেন। চশমায়ও ভ্যাট বসিয়েছে সরকার। এমনকি সানগ্লাস বা রোদচশমা কিনলে নিস্তার নেই, ভ্যাট দিতে হবে। কোথাও ঘুরতে গেলেও সব ধরনের হোটেলের ভাড়ায় ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে শুল্ক। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ভ্যাটময় হয়ে উঠেছে। ভ্যাটের হার বাড়ানোর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে তা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে জীবনযাত্রার খরচে।  

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খবরের খোঁজে দেয়ালে দেয়ালে

জিল্লুর রহমান কয়েক দিন পরই অবসরে যাবেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিন দশক আগে এই চাকরিতে ঢুকেছিলেন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। তখন হন্যে হয়ে সরকারি চাকরি খুঁজছিলেন। বাংলাদেশে তখন মুঠোফোন এবং চট করে ছবি তোলার ব্যবস্থা ছিল না। বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে সাঁটানো দৈনিক পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে লিখে রাখতে হতো নোটবুকে। নব্বইয়ের দশকে তিন বছর ধরে এই নগরের বিভিন্ন দেয়ালের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তিনি শুধু চাকরি খুঁজতেন। এভাবেই খোঁজ পেয়েছিলেন বর্তমান চাকরির। সেটা ১৯৯৬ সালের কথা।  

ঢাকায় এখনো একইভাবে না কিনেও দৈনিক পত্রিকা পড়া যায়। টানাটানি, ভাগাভাগি না করে যতক্ষণ ইচ্ছা পড়া সম্ভব। এর জন্য যেতে হবে রাজধানীর কয়েকটি নির্দিষ্ট দেয়ালের কাছে। দৈনিক বাংলার মোড়, প্রেসক্লাবের বিপরীতে, শান্তিনগর বাজারের পাশে, সায়েন্স ল্যাব মোড়ে, বাংলামোটরে অথবা মগবাজারে এক গলির মুখের দেয়ালের সামনে দাঁড়ালে প্রতিদিন সকাল থেকে পড়া যাবে কয়েকটি করে পত্রিকা। আরও নিশ্চয়ই অনেক জায়গায় রয়েছে এ ব্যবস্থা। কোথাও পাঁচ ছয়টি, কোথাও দশ থেকে বারোটি পর্যন্ত সংবাদপত্র সাঁটা থাকে।

বাংলাদেশে পথের শ্রমজীবী মানুষেরা বিশ্রাম নিতে নিতে ছবি দেখেন, তাড়াহীন পথচারী দুটো খবর পড়ে নেন। চাকরিপ্রার্থীরা মুঠোফোনে ছবি তুলে নেন বিজ্ঞাপনের। কিন্তু এই পত্রিকাগুলো কারা দিয়ে যায়, নির্বাচন করা হয় কীভাবে—জানা থাকে না কারও।

মানুষকে তথ্যসেবা দিতে এবং খবরের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে জনসেবামূলক কাজটি কবে থেকে শুরু হয়েছে বলা কঠিন। গ্যেটি ইমেজের আর্কাইভের ছবি বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, এই সেবামূলক কাজটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও আছে। চীনে ১৯৫৮ সালে মাও সে–তুংয়ের ‘গ্রেট স্প্যারো ক্যাম্পেইন’ (চড়ুই নিধন আন্দোলন)–এর খবরটি পথপ্রাচীরের গায়ে লাগানো হলে সেখানে পাঠকের ঢল নেমেছিল।

বাংলাদেশে পথের শ্রমজীবী মানুষেরা বিশ্রাম নিতে নিতে ছবি দেখেন, তাড়াহীন পথচারী দুটো খবর পড়ে নেন। চাকরিপ্রার্থীরা মুঠোফোনে ছবি তুলে নেন বিজ্ঞাপনের। কিন্তু এই পত্রিকাগুলো কারা দিয়ে যায়, নির্বাচন করা হয় কীভাবে—জানা থাকে না কারও। রাজধানীর শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলার মোড়, প্রেসক্লাবের সামনে এবং সায়েন্স ল্যাব মোড়ের দেয়ালে লাগানো পত্রিকার কাছে গিয়ে দেখা যায়, আগের দিনের সংবাদপত্রের ওপরই আরেকটি লাগানো হয়েছে। এতে দেয়ালে পুরো আস্তর জমেছে। কোথাও কোথাও আবার পুরোনো পত্রিকা তুলে দিয়ে নতুনটি বসানো হয় আঠা দিয়ে।

মূলধারার গণমাধ্যম দেয়ালে কমই খুঁজে পাওয়া যায়। চাকরির বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে জমি বা পাত্র-পাত্রীর খবর যেসব পত্রিকার প্রধান খবর—সেই পত্রিকাগুলোই থাকে এখানে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষই পত্রিকা পড়েন পথে দাঁড়িয়ে। কেউ কেউ বাড়িতে বা কর্মস্থলে পত্রিকা পড়েও আবার পথে দাঁড়িয়ে যান অভ্যাসবশত। তাঁদের একজন শাহ আলী। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে লাগানো পত্রিকা পড়ছিলেন ৪ সেপ্টেম্বর সকালে দাঁড়িয়ে। বললেন, বহু বছরের অভ্যাস। এসব পত্রিকায় বিচিত্র খবর থাকে। দেখা গেল, এখানে লাগানো হয়েছে উত্তরদক্ষিণ, জাতীয় অর্থনীতি, আমার কাগজ–এর মতো ১২টি সংবাদপত্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে বসে থাকা এসব দৈনিকের মধ্যে গত শতকের আশির দশকে দৈনিক জনতা পত্রিকাটিও আছে।

শাহবাগের মতো ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পত্রিকার এজেন্ট আলীরাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিজ্ঞাপন পেলে দেয়ালে সেদিনের পত্রিকা লাগায় কম গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলো। সাধারণত ওই পত্রিকার এজেন্টরাই দিয়ে থাকে। এ কাজগুলো হকাররা করেন না। কিছু পত্রিকা আছে, যারা লাইসেন্স ঠিক রাখার জন্য মাঝেমধ্যে পত্রিকা প্রকাশ করে। তারাও দেয়ালে পত্রিকা দেন।

রাজধানীর শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলার মোড়, প্রেসক্লাবের সামনে এবং সায়েন্স ল্যাব মোড়ের দেয়ালে লাগানো পত্রিকার কাছে গিয়ে দেখা যায়, আগের দিনের সংবাদপত্রের ওপরই আরেকটি লাগানো হয়েছে। এতে দেয়ালে পুরো আস্তর জমেছে। কোথাও কোথাও আবার পুরোনো পত্রিকা তুলে দিয়ে নতুনটি বসানো হয় আঠা দিয়ে।

তবে ঠাকুরগাঁও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নব্বইয়ের দশকে ঢাকা শহরের দেয়ালে তিনি সংবাদ–এর মতো পত্রিকা পড়েছেন। তখন মানুষের হাতে যন্ত্র এত সহজলভ্য ছিল না। তবে এই সময়েও রাজধানীতে দেয়ালে পত্রিকা এবং পথচারীদের পাঠের আগ্রহ দেখে বিস্মিত হতে হয়।

যাত্রী নামায় দিয়ে একটু জিরাইলাম। নির্বাচনের খবর আছে নাকি খুঁজতেছিলাম।রিকশাচালক চাঁদপুরের রুহুল আমিন

মুদ্রণযন্ত্র আসার আগেও দেয়ালে পত্রিকার প্রচলনের খবর পাওয়া যায়। তবে সেসব ছিল হাতে লেখা পত্রিকা। যার অধিকাংশ প্রকাশিত হতো শিক্ষার্থীদের উৎসাহে। জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র কোন দেশে কবে প্রথম দেয়ালে লাগানো হয়েছিল, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে প্রাচীন রোমে ‘অ্যাক্টা’ নামের সংবাদপত্র নিয়মিতভাবে দেয়ালে টাঙানোর খবর, স্পেনের গৃহযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠনগুলোর দেয়ালপত্রিকাকে একটি শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায় সংবাদপত্রবিষয়ক বিভিন্ন ইতিহাসের বইয়ে।

৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পত্রিকা পড়তে থাকা রিকশাচালক চাঁদপুরের রুহুল আমিনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী পড়েন? প্রচণ্ড গরমে হাতে গামছা দুলিয়ে বাতাস নিতে নিতে বললেন, ‘যাত্রী নামায় দিয়ে একটু জিরাইলাম। নির্বাচনের খবর আছে নাকি খুঁজতেছিলাম।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ