আজহারীর মাহফিলে লাখো মানুষের ঢল, ঐক্যের আহ্বান
Published: 18th, January 2025 GMT
লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাঠে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হয় জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর তাফসিরুল কুরআন মাহফিল। ইসলামিক সোসাইটি লালমনিরহাটের আয়োজনে এ মাহফিলে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে ধরণা করা হচ্ছে।
মূল প্যান্ডেল ছাড়াও আশপাশের পাঁচটি মাঠে প্রজেক্টরের মাধ্যমে মাহফিলের বক্তব্যে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্যে ড.
তিনি আরও বলেন, “তাফসির মাহফিলে হিন্দু ভাইয়েরা কোনো বিরোধ তৈরি করেন না। খুলনায় কয়েকশো হিন্দু ভাই আমাদের আলোচনা শুনতে এসেছিলেন। অনেক বৌদ্ধ ভাইয়েরাও মাহফিলে বসেন। তাদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। ইসলামের সৌন্দর্য এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যেন অমুসলিম ভাইয়েরা আমাদের আচরণে মুগ্ধ হয়।”
বয়ানে আজহারী আরও উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার উদাহরণ নেই। আমরা সবাই ভাই ভাই। তবে কিছু দুষ্টু লোক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়। বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ ধরনের দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ওয়াজ মাহফিলে তিনি আরও জানান, হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠানের সময় মুসলিমরা মাহফিল আয়োজন করেন না, তেমনিভাবে পূজা চলাকালীন মাদরাসার ছাত্ররা মণ্ডপ পাহারা দিয়ে সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, “গোটা বিশ্বে এমন সম্প্রীতির উদাহরণ বিরল।”
মাহফিল উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, আনসার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। আয়োজক কমিটির সভাপতি আব্দুল হাকিম জানান, মাহফিলকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত থেকেই মাঠে চাদর ও কম্বল নিয়ে অবস্থান নেন ভক্তরা। শীত উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা সারারাত মাঠে কাটান।
ঐতিহাসিক এই মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে শেখ শফি উদ্দিন কমার্স কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এসময় ভক্তরা ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান।
মাহফিলে ইসলামের আলোকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. আজহারী। কয়েক লাখ মানুষের অংশগ্রহণে মাহফিল শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়।
ঢাকা/আমিরুল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।