খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ছাত্র অর্ণব কুমার সরকার হত্যা মামলার তদন্ত এগোচ্ছে তিনটি মোটিভ সামনে রেখে। ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে আনা অর্ণবের বন্ধু মো. গোলাম রব্বানীকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। তবে এ মামলায় নতুন কেউ ধরা পড়েনি। এদিকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, অর্ণব হত্যার পর গত শুক্রবার রাতে আটক তিনজনের মধ্যে দু’জনকে রোববার ভোরে তাদের মা-বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার এসআই আশরাফুল আলম জানান, অর্ণব ও গোলাম রব্বানী আগে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে একসঙ্গে লেখাপড়া করতেন, তারা পরস্পরের বন্ধু। রব্বানীর সঙ্গেই অর্ণবের সর্বশেষ ফোনে কথা হয়েছিল। রব্বানীই তাঁকে তেঁতুলতলা মোড়ে ডেকে নিয়ে আসেন। সেখানে অর্ণব খুন হন। তিনি জানান, রব্বানীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। তবে এখনও শুনানি হয়নি।
এদিকে গত শনিবার রাতে অর্ণবের বাবা নীতিশ সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে সোনাডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে হত্যার কারণ উল্লেখ করা হয়নি। নীতিশ সরকার বলেন, অর্ণবের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল বলে আমার জানা নেই। বুঝতে পারছি না কী কারণে, কারা তাকে হত্যা করেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, অর্ণব হত্যার ব্যাপারে প্রেম-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ছাড়া কোনো বন্ধু কিংবা কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশপাশের এলাকাগুলোর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, সন্ত্রাসীরা ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে তেঁতুলতলা মোড়ে এসে অর্ণবকে প্রথমে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি পড়ে গেলে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা পালিয়ে যায়।
এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুরে নগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউতে ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করেন। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও নগরীর রয়্যাল মোড়ে মানববন্ধন করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫